একটি সুপ্রাচীন মন্দিরের দখল নিতে দুই পড়শি দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র (Thailand-Cambodia Conflict)। দুপক্ষই পরস্পরের দিকে কামান দাগছে। দুই দেশের সীমান্তে জারি হয়েছে সামরিক আইন (মার্শাল ল)। যে প্রাচীন মন্দিরের দখল ঘিরে সংঘর্ষ সেটি একটি কথিত শিব মন্দির। এর স্থাপত্য চমকদার। আন্তর্জাতিক পর্যটন ও পুরাতত্ত্ব স্থাপত্যশৈলীতে বিশেষ গুরুত্ব পায় দুটি দেশ। বছরের বিভিন্ন সময় ভারতীয়রা যান। ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিদেরও অন্যতম গন্তব্য। তবে সাবধান।
বর্তমানে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সীমান্ত অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উভয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই প্রতিবেদনে চলমান পরিস্থিতি এবং ভ্রমণকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতার বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ নতুন নয়। এই বিরোধ বিশেষ করে প্রাহ বিহার (Preah Vihear) মন্দির ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। জুলাই ২০২৫-এর মাঝামাঝি সময়ে নতুন করে সামরিক তৎপরতা দেখা গেছে এবং উভয় পক্ষই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। গোলাগুলির ঘটনা এবং দু’দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
২০২৫ সালের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শোনা যাচ্ছে কামান দাগার আওয়াজ। কিছু গ্রাম খালি করে দেওয়া হয়েছে এবং স্থানীয়রা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি, সীমান্তে পর্যটন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী এখনও মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে, যা বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
ভ্রমণকারীদের জন্য সতর্কতা
পর্যটকদের এই মুহূর্তে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা যেমন সিসাকেত (Sisaket), সুরিন (Surin), এবং প্রাহ বিহার প্রদেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দূতাবাস এবং ভ্রমণ বিষয়ক সংস্থা সীমান্ত অঞ্চলে ভ্রমণের বিষয়ে লাল সতর্কতা জারি করেছে।
বিশেষ সতর্কতার বিষয়:
1. সীমান্ত অঞ্চল এড়িয়ে চলুন: থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে কোনোভাবেই ভ্রমণ করবেন না। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে পারে।
2. পর্যবেক্ষণ এড়িয়ে চলুন: অনেক পর্যটক কৌতূহলবশত ঘটনাস্থলে যেতে চান, কিন্তু এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোনোভাবেই সুপারিশযোগ্য নয়।
3. স্থানীয় সংবাদের ওপর নজর রাখুন: ভ্রমণের পূর্বে ও ভ্রমণের সময় স্থানীয় সংবাদ এবং দূতাবাসের আপডেট অনুসরণ করুন।
4. পরিকল্পনা বদল করুন: যারা থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়ায় ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের উচিত নির্ধারিত রুট পুনর্বিবেচনা করা এবং ভ্রমণ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা।
যদি কেউ থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া ভ্রমণ করেন, তবে সীমান্ত এলাকা বাদ দিয়ে রাজধানী এবং অন্যান্য নিরাপদ অঞ্চলগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পরামর্শ ও আপডেট অনুসরণ করতে হবে। থাইল্যান্ডে যেমন ব্যাংকক, চিয়াংমাই, ফুকেট এখনও নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তেমনি কম্বোডিয়ায় নম পেন ও সিয়েম রিপও আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে।
নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যেকোনো ধরনের ভ্রমণ অনিরাপদ। জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পর্যটকদের উচিত অতীব সতর্ক থাকা এবং যথাসম্ভব সংঘর্ষপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে নিরাপদ সিদ্ধান্ত।