নয়াদিল্লি: দীর্ঘ দু-বছরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অবশেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ‘ঘরে’ ফিরছেন প্যালেস্তাইনিরা (Palestine)। তবে হয়ত ঘরে ফেরা হবে না প্যালেস্তাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী নেতা মারওয়ান বারঘৌতির (Marwan Barghouti)। তাঁর পাশাপাশি অন্যান্য আরও বেশ কয়েকজন “হাই প্রোফাইল” বন্দির মুক্তি খারিজ করে দিয়েছে ইজরায়েল।
শুক্রবার ইজরায়েল (Israel) সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রায় ২৫০ জন বন্দীর তালিকা প্রকাশের পরেই তা স্পষ্ট হয়নি। হামাসের বরিষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক জানিয়েছিলেন বারঘৌতি (Marwan Barghouti) সহ আরও বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য প্যালেস্তানিয় নেতাকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
তবে বারঘৌতিকে ইজরায়েল ‘সন্ত্রাসবাদী’ নেতা হিসেবে দখে। ২০০৪ সালে পাঁচজন ইজরায়েলির মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। কিন্তু বারঘৌতিকে মুক্ত না করার পেছনে অনেকেই অন্য একটি বিশেষ কারণ দেখছেন।
মারওয়ান বারঘৌতিকে কেন মুক্ত করবে না ইজরায়েল?
অএঙ্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, উপরে মারওয়ান বারঘৌতিকে একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দাবী করলেও আদপে প্যালেস্তাইনে তাঁর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বকে ভয় পান নেতানিয়াহু। কিছু প্যালেস্তাইনি তাঁকে তাঁদের নিজস্ব নেলসন ম্যান্ডেলা হিসেবে দেখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই বিপ্লবী, যিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।
শুক্রবার গাজা যুদ্ধবিরতি এবং ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহার কার্যকর হওয়ার পর, হামাস সোমবারের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত ইজরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি মুক্তি পাবেন ইজরায়েলের জেলে থাকা ২৫০ প্যালেস্তাইনি। সেই সঙ্গে গত দুই বছরে গাজা থেকে আটক এবং কোনও অভিযোগ ছাড়াই আটক থাকা প্রায় ১,৭০০ জনকে মুক্তি দেবে ইজরায়েল।
যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি উভয় পক্ষের ক্ষেত্রেই শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। ইজরায়েল বন্দীদের সন্ত্রাসী হিসেবে দেখে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মঘাতী বোমা হামলায় জড়িত। অন্যদিকে, প্যালেস্তানিয়রা ইজরায়েলের জেলে থাকা বন্দীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখেন।
বারঘৌতির মুক্তির জন্য বহুদিন থেকে দাবী জানাচ্ছে হামাস
শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপেই বারঘৌতির মুক্তির দাবী জানিয়েছিল হামাস। কিন্তু ইজরায়েল গোড়াতেই তা নাকচ করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১১ সালে হামাসের বরিষ্ঠ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে মুক্তি দেওয়ার পর ইজরায়েল আশঙ্কা করছে যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী থাকা এই বন্দী ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে গাজায় সর্বশেষ যুদ্ধের সূত্রপাতকারী হামলার অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন এবং গত বছর ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার আগে তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আবার অনেকেই ৬৬ বছর বয়সী বারঘৌতিকে (Marwan Barghouti) ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে মনে করেন।
বারঘৌতি প্যালেস্তাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা
১৯৫৯ সালে ওয়েস্ট ব্যাংকের কোবার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বারঘৌতি (Marwan Barghouti)। বির জেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাজনীতি অধ্যয়নকালে তিনি ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতে সাহায্য করেছিলেন। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে সংঘটিত প্রথম প্যালেস্তাইন বিদ্রোহের একজন সংগঠক হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।