লাহোর-ইসলামাবাদে হামলার হুমকি, পাকিস্তানে বাড়ছে যুদ্ধের আশঙ্কা

Pakistan Army

পাকিস্তানের (Pakistan) নিরাপত্তা মহলে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP)-এর সর্বশেষ বার্তা। সংগঠনটি ঘোষণা করেছে যে তাদের পরবর্তী হামলার লক্ষ্য আর সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া নয়, বরং সরাসরি পাকিস্তানের তিনটি প্রধান শহর লাহোর, ইসলামাবাদ ও করাচি।

Advertisements

TTP জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ আফগান পশতুনদের জোরপূর্বক বহিষ্কারের প্রতিশোধ। সংগঠনটির মতে, পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী পশতুনদের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে, আর সেই অন্যায়ের জবাব এবার রক্ত দিয়েই দিতে হবে।

   

এই ঘোষণা প্রকাশ্যে আসতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “যদি পাকিস্তানের উপর কোনও হামলা হয়, তা হবে যুদ্ধ ঘোষণার সমান।” তিনি আরও বলেন, “তেহরিক-ই-তালিবান যেন ভুলেও না ভাবে যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দুর্বল।”

পাকিস্তানের গোপন সূত্রগুলি জানিয়েছে, TTP ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অংশে গোপন ঘাঁটি তৈরি করছে। বিশেষত লাহোর এবং করাচিতে তাদের কিছু স্লিপার সেল সক্রিয় হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা। সেনা ও পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করেছে সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করতে।

সংগঠনটির সাম্প্রতিক বিবৃতি এসেছে তিরাহ উপত্যকায় একাধিক সংঘর্ষের পরে। ওই এলাকায় বহু বছর ধরে সেনা অভিযান চলছিল। ২০২৫ সালে ওই উপত্যকায় একটি বিমান হামলায় বহু নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকেই স্থানীয় উপজাতীয় প্রবীণদের উদ্যোগে আলোচনার মাধ্যমে TTP জানায় যে তারা উপত্যকা ছেড়ে যাচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি না হয়।

তবে সংগঠনটি স্পষ্ট করেছে, তাদের এই সরে যাওয়া কোনও দুর্বলতার চিহ্ন নয়, বরং নতুন কৌশল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিবৃতিতে তারা জানায়, “আমরা আমাদের যুদ্ধ নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি, এবার শত্রুর হৃদয়ে আঘাত হানব।”

Advertisements

এমনকি এক সাম্প্রতিক ভিডিওতে দেখা যায়, এক তালিবান যোদ্ধা পাকিস্তানের জাতির জনক মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ এবং জাতীয় কবি আল্লামা ইকবালের প্রতিকৃতি অপমান করছে। ভিডিওটি পাকিস্তানে ভাইরাল হওয়ার পর জনমনে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তবে TTP বলেছে, এটি তাদের “বিদ্রোহের প্রতীক”।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। আফগানিস্তান সীমান্তে অস্থিরতা এবং পশতুনদের মানবাধিকার ইস্যু এই সংঘাতকে আরও ঘনীভূত করছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, পাকিস্তান যদি এখনই রাজনৈতিক সমাধান না খোঁজে, তাহলে পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে।

লাহোর, ইসলামাবাদ ও করাচির নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা জারি করেছে। জনবহুল এলাকায় পুলিশ ও সেনার টহল বাড়ানো হয়েছে। নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানজুড়ে আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে। বহু মানুষ মনে করছেন, দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরও দেশ আবার সন্ত্রাস ও যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, “এই সংঘাত কেবল সামরিক নয়, এটি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের লড়াই।”