আফগানিস্তান: ফের রক্তাক্ত জঙ্গি হামলা পাকিস্তানে। বুধবার আফগানিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের দুর্গম এলাকায় সেনা কনভয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় ইসলামপন্থী তালেবান জঙ্গিরা। এই আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানের অন্তত ১১ জন সেনা (Pakistani Soldiers) সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে দুইজন অফিসার ও নয়জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। ঘটনাটির দায় স্বীকার করেছে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP)।
সামরিক ও নিরাপত্তা সূত্রে জানা গিয়েছে, আফগান সীমান্ত সংলগ্ন খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের এক প্রত্যন্ত জেলায় সেনাদের একটি কনভয় লক্ষ্য করে প্রথমে ধারাবাহিকভাবে একাধিক রাস্তার ধারে পাতা বোমা (IED) বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এরপরেই বড়সড় জঙ্গি দল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। আকস্মিক হামলার তীব্রতায় সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করতে না পেরে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েন।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলার পরেই বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকা ঘিরে ফেলেছে এবং জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চলছে। তবে সেনার জনসংযোগ দফতর (ISPR) এই ঘটনার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের এক মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারাই এই হামলা চালিয়েছে এবং পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, এই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য পাকিস্তান সরকারের পতন ঘটিয়ে কঠোর শরিয়াভিত্তিক ইসলামিক শাসন কায়েম করা।
গত কয়েক মাসে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সেনা টহল ও কনভয়ের উপর আক্রমণ প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিদের অবাধ যাতায়াত পাকিস্তানের সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলামাবাদ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, পাকিস্তানি তালেবান আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে প্রশিক্ষণ শিবির ও হামলার পরিকল্পনার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, আফগান ভূমিকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না।
তবে বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে পাকিস্তানি তালেবানের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে এবং স্থানীয় মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলতে পারে। ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদ কাবুল প্রশাসনের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।
এই ঘটনা পাকিস্তান সেনার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হামলায় সেনাদের হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে এবং সরকারের উপর চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সীমান্ত এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা এখন ইসলামাবাদের কাছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।