নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন সুশীলা কারকি

কাঠমাণ্ডু: নেপাল আবারও বড় রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তরুণ সমাজের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়।…

Sushila Karki

কাঠমাণ্ডু: নেপাল আবারও বড় রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তরুণ সমাজের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। বিশেষত “Gen Z আন্দোলন” এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি শেষ পর্যন্ত চাপে পড়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, মন্ত্রিসভার বাকিরাও পদ ছাড়েন। এক কথায়, নেপালের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে।

Advertisements

এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় আসে অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণা। বাংলাদেশের মতোই অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পথে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মূল প্রশ্ন ছিল—এই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেবেন কে? প্রথমে কাঠমাণ্ডুর জনপ্রিয় মেয়র ও র‌্যাপার বালেন্দ্র শাহর নাম উঠে আসে। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে তিনি এই দায়িত্ব নিতে রাজি নন। এরপর আলোচনায় আসে বিদ্যুৎ সঙ্কট সমাধানে পরিচিত কুলমান ঘিসিংয়ের নাম। তিনিও শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেননি।

   

অবশেষে সবার নজর গিয়ে পড়ে নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকির (Sushila Karki) দিকে। নেপালের ইতিহাসে তিনি প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এবং দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন তিনি। তরুণ আন্দোলনকারীরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে তিনি থাকলে দেশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসতে পারে। তাই সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে মধ্যরাতে দীর্ঘ বৈঠকের পর কারকির নামেই সিলমোহর পড়ে।

রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে সূত্র জানাচ্ছে, আজ, শুক্রবার দুপুরেই সুশীলা কারকি শপথ নিতে পারেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে। এই সিদ্ধান্তে অনেকের আশা—অবশেষে অশান্ত নেপালে শান্তির সূচনা হতে চলেছে।

তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেওয়া সংবিধানবিরোধী হতে পারে। আবার অন্য একদল মনে করছে, দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে আপাতত অন্য কোনো বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মের দাবি স্পষ্ট—তারা দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেখতে চায় না।

ভারতের সঙ্গেও সুশীলা কারকির একটি যোগ রয়েছে। তিনি বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং ভারত সম্পর্কে সবসময় ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। ফলে ভারতের সঙ্গে নেপালের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক আরও ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে—কারকির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন স্থায়ী হবে এবং তারা কবে পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। আন্দোলনকারীরা চাইছে এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হোক। তবে সেনার প্রভাব থাকায় ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত।

যাই হোক, নেপালের সাধারণ মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্ম নতুন আশার সঞ্চার করেছে। গত কয়েকদিনের সহিংস বিক্ষোভের পর ধীরে ধীরে শান্তি ফিরছে কাঠমাণ্ডু ও আশপাশে। দোকানপাট খুলছে, যানবাহন চলছে, মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় একটাই—“সুশীলা কারকি কি পারবেন নেপালের অস্থিরতা কাটিয়ে আনতে?”