পাকিস্তানের (Pakistani) খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার খাদ্দি এলাকায় আজ সকালে একটি ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন। এই হামলায় একজন আত্মঘাতী বোমারু বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি নিয়ে সামরিক কনভয়ের উপর আঘাত হানে।
এই ঘটনা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাইবার পাখতুনখোয়ায় সেনাবাহিনীর উপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান তালিবানের (তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি) হাফিজ গুল বাহাদুর গোষ্ঠীর আত্মঘাতী বোমারু শাখা।
হামলার বিবরণ
উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার খাদ্দি এলাকায় শনিবার সকালে একজন আত্মঘাতী বোমারু বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কনভয়ের উপর আঘাত হানে (Pakistani)। স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানান, “একজন আত্মঘাতী বোমারু বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি দিয়ে সামরিক কনভয়ে ধাক্কা মারে।
এই বিস্ফোরণে ১৩ জন সেনা নিহত এবং ১০ জন সেনা সদস্য ও ১৯ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।” এই বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কাছাকাছি দুটি বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে, ফলে ছয়জন শিশু আহত হয়। আহতদের মধ্যে চারজন সেনার অবস্থা গুরুতর, এবং তাদের সামরিক হাসপাতালে হেলিকপ্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর (Pakistani) পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, এই হামলায় আটজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, যদিও পরবর্তী প্রতিবেদনে মৃতের সংখ্যা ১৬-এ উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়।
হামলার পটভূমি
খাইবার পাখতুনখোয়া (Pakistani) প্রদেশ, বিশেষ করে উত্তর ওয়াজিরিস্তান, আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে পাকিস্তানের এই অঞ্চলে হিংসা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলামাবাদ বারবার অভিযোগ করেছে যে, আফগান তালিবান তাদের ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য ব্যবহার করতে দিচ্ছে, যদিও তালিবান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এএফপি-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় প্রায় ২৯০ জন, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নিহত হয়েছেন। গত বছর (২০২৪) পাকিস্তানে প্রায় ১,৬০০ জন হামলায় নিহত হয়েছিল, যার প্রায় অর্ধেক ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। এটি গত এক দশকে পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক বছর ছিল।
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে, যার লক্ষ্য সরকারকে উৎখাত করে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই হামলা টিটিপি-র হাফিজ গুল বাহাদুর গোষ্ঠীর আত্মঘাতী শাখা দায় স্বীকার করেছে।
সমাজে প্রভাব
এই হামলা পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আতঙ্ককে পোষণ করা পাকিস্তান এখন নিজেই সেই আগুনে পুড়ছে।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “এটি শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা নয়, এটি জাতীয় স্থিতিশীলতা ও শান্তির উপর হামলা।”
এই হামলা পাকিস্তানের (Pakistani) সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির ইঙ্গিত দেয়। এটি পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তাদের চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এই হামলা ভয় এবং অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করেছে, বিশেষ করে বিস্ফোরণে ছয় শিশু আহত হওয়ায় সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
কৃষকদের ওপর জল চার্জ আরোপের কোনো পরিকল্পনা নেই, কেন্দ্রের স্পষ্ট বার্তা
পাকিস্তানের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ (Pakistani)
পাকিস্তানের (Pakistani) খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। গত সপ্তাহে বেলুচিস্তানের কিল্লা আবদুল্লাহ জেলায় একটি গাড়ি বোমা হামলায় চারজন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হয়েছিল।
এছাড়া, গত ২৫ জুন টিটিপি-র হামলায় ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাইলট অভিনন্দন বর্ধমানকে বন্দী করা পাকিস্তানি বিশেষ বাহিনীর মেজর সৈয়দ মুইজ নিহত হন। এই ঘটনাগুলো পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়।
খাইবার পাখতুনখোয়ায় (Pakistani) এই আত্মঘাতী হামলা পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা এবং সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রতিফলন। টিটিপি-র এই হামলা শুধু নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করেনি, বরং বেসামরিক নাগরিকদের জীবনেও প্রভাব ফেলেছে।
পাকিস্তান সরকারের উপর এখন চাপ বাড়ছে যাতে তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই ঘটনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ।