নয়ডা: ভারতের প্রযুক্তি জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। মঙ্গলবার সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi) ঘোষণা করলেন, এ বছর থেকেই দেশীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন শুরু করবে ভারত। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “দূর নয় সেই দিন, যখন বিশ্বের ক্ষুদ্রতম চিপ ভারত তৈরি করবে এবং তা বিশ্বে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনবে। শীঘ্রই বিশ্ব বলবে ‘Designed in India, Made in India, Trusted by the World’।”
সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ সম্মেলনটি মঙ্গলবার নয়ডায় অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সাম্প্রতিক সাফল্য, বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রধান অর্থনীতি হিসেবে ভারত বিশ্ব বাজারে নিজের স্থান সুসংহত করতে চলেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাজারের আকার ছিল ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষে তা বেড়ে ৪৫-৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাজারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০-১১০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে দেশে ১৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে ১০টি সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্প চলছে, যার মধ্যে নয়ডা ও বেঙ্গালুরুতে দুটি অত্যাধুনিক ৩ ন্যানোমিটার ডিজাইন সুবিধা নির্মাণাধীন।
সম্প্রতি জাপান সফরে ভারতের সঙ্গে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে বড় ঘোষণা হয়। টোকিও ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন (৬৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতও অন্তর্ভুক্ত। মোদীর বক্তব্যে স্পষ্ট, ভারত এখন বিশ্বে প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
মোদী বলেন, “ভারতের মানবসম্পদ আজ বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি। বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন খাতে প্রায় ২০ শতাংশ প্রতিভা ভারতের।” তরুণ জনসংখ্যা এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদদের উপস্থিতি ভারতের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে ত্বরান্বিত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মোদীর বক্তব্য অনুযায়ী, ভারত বর্তমানে তিনটি বড় ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় এগিয়ে রয়েছে: সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রাংশের উৎপাদন, গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল সরবরাহ, এবং গবেষণা থেকে শুরু করে এআই, বিগ ডেটা এবং ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা। তিনি বলেন, “আজকের ভারত বিশ্বের কাছে আস্থা জাগায়। যখন পরিস্থিতি সংকটময় হয়, তখন ভারতের উপর ভরসা করা যায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কের চাপে ভারতের রপ্তানি খাত সমস্যায় পড়েছিল। তাই ভারত সরকার নতুন প্রবৃদ্ধির পথ খুঁজছে। বিশ্বে চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ সীমিত, এই সুযোগে ভারত ডিজাইন থেকে উৎপাদন এবং প্যাকেজিং পর্যন্ত সম্পূর্ণ একটি ‘ইকোসিস্টেম’ গড়ে তুলতে চায়, যাতে দেশ আত্মনির্ভর এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী হয়।
মোদীর ঘোষণা ভারতের প্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ ভারতকে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারে অন্যতম শীর্ষ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।