দেশীয় তেলের ব্যবহার কমাতে নয়া উদ্দ্যোগ সৌদি আরবের

বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব (Saudi Arabia) অভ্যন্তরীণ অপরিশোধিত তেলের ব্যবহার দ্রুত হ্রাস করার লক্ষ্যে সৌর, বায়ু এবং সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ…

Saudi Arabia new agenda

বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব (Saudi Arabia) অভ্যন্তরীণ অপরিশোধিত তেলের ব্যবহার দ্রুত হ্রাস করার লক্ষ্যে সৌর, বায়ু এবং সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এই উদ্যোগ ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচির অংশ, যার মাধ্যমে সৌদি আরব তেল-নির্ভর অর্থনীতি থেকে বৈচিত্র্যময় এবং টেকসই অর্থনীতির দিকে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়েছে।

এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় এবং পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের প্রতি সৌদি আরবের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। সৌদি আরব, বিশ্বের তেল রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ সরবরাহ করে, ঐতিহ্যগতভাবে তার অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শিল্প কার্যক্রমের জন্য অপরিশোধিত তেলের উপর নির্ভরশীল ছিল।

   

দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ ব্যারেল তেল অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহার করে, যার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জল নিষ্কাশনের জন্য। তবে, ‘ভিশন ২০৩০’-এর অধীনে সৌদি আরব ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশটি সৌর, বায়ু এবং সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।

সৌদি আরবের সৌর শক্তি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। সাকাকা সৌর প্রকল্প, যা ইতিমধ্যে চালু হয়েছে, ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং এটি কেবলমাত্র শুরু। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ গিগাওয়াট সৌর শক্তি এবং ১০ গিগাওয়াট বায়ু শক্তি উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে।

নিওম, একটি ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মেগা-সিটি প্রকল্প, সম্পূর্ণরূপে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উপর নির্ভর করবে। এই প্রকল্পে সৌর ও বায়ু শক্তির পাশাপাশি সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য বিশাল বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) এই প্রকল্পগুলোর জন্য ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ করেছে।

সৌদি আরব সবুজ হাইড্রোজেনকে ভবিষ্যতের জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করছে। সবুজ হাইড্রোজেন, যা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে জল থেকে উৎপন্ন হয়, কার্বন নির্গমন ছাড়াই শক্তি সরবরাহ করতে পারে। নিওমে বিশ্বের বৃহত্তম সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্প নির্মাণাধীন, যা ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতিদিন ৬০০ টন হাইড্রোজেন উৎপাদন করবে।

Advertisements

এই হাইড্রোজেন ইউরোপ এবং এশিয়ায় রপ্তানি করা হবে, যা সৌদি আরবকে পরিচ্ছন্ন শক্তির বাজারে একটি নেতৃস্থানীয় খেলোয়াড়ে পরিণত করবে। এই প্রকল্পে সৌদি আরবের এসি ডব্লিউ এ পাওয়ার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার প্রোডাক্টস অ্যান্ড কেমিক্যালস কোম্পানি যৌথভাবে কাজ করছে।

অভ্যন্তরীণ তেল ব্যবহার হ্রাসের ফলে সৌদি আরব আরও বেশি অপরিশোধিত তেল রপ্তানির জন্য উপলব্ধ করতে পারবে, যা দেশটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। বর্তমানে, সৌদি আরব প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করে, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

এছাড়াও, এই পদক্ষেপ দেশটির কার্বন নির্গমন হ্রাসে সহায়তা করবে, যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব ২০৬০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য নিয়েছে।বিশ্বব্যাপী প্রভাবসৌদি আরবের এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে গভীর প্রভাব ফেলবে।

রবিবারেও পরীক্ষা স্কুলে, সহমত অভিভাবকরাও

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং তেল নির্ভরতা হ্রাসের ফলে দেশটি পরিচ্ছন্ন শক্তির ক্ষেত্রে একটি নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এটি অন্যান্য তেল-নির্ভর দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, তেলের চাহিদা হ্রাস পেলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমতে পারে, যা তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।