ভারত সহ ১৪ টি দেশের ভিসা বাতিল সৌদি আরবের

হজ তীর্থযাত্রার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরব (saudi arabia) ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে…

saudi arabia cancels visa

হজ তীর্থযাত্রার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরব (saudi arabia) ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। উমরাহ, ব্যবসায়িক এবং পারিবারিক সফরের ভিসার উপর এই নিষেধাজ্ঞা জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যা মক্কায় হজ তীর্থযাত্রার সমাপ্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

   

এই নিষেধাজ্ঞা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন এবং মরক্কো—এই ১৪টি দেশের উপর প্রভাব ফেলবে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে, যাতে ব্যক্তিরা সঠিক নিবন্ধন ছাড়া হজ পালনের চেষ্টা করতে না পারে। তবে, পাকিস্তানের এআরওয়াই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, যাঁদের কাছে উমরাহ ভিসা রয়েছে তাঁরা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন।

ফের স্তন ক্যান্সার তাহিরার, ফাইট করতে প্রস্তুত, আয়ুষ্মান লিখলেন ‘আমার হিরো’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে কারণ অতীতে অনেক বিদেশি নাগরিক উমরাহ বা ভিজিট ভিসায় দেশে প্রবেশ করে অবৈধভাবে বেশি সময় থেকে গেছেন এবং সরকারি অনুমোদন ছাড়াই হজে অংশ নিয়েছেন। এর ফলে ভিড় এবং তীব্র গরমের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের হজের সময় এমন একটি ঘটনায় কমপক্ষে ১,২০০ তীর্থযাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ধরনের ঘটনা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কোটা ব্যবস্থা ও অবৈধ অংশগ্রহণ (saudi arabia)

সৌদি আরবের (soudi arab) একটি কোটা ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রতিটি দেশের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক হজের স্লট বরাদ্দ করে তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে। যাঁরা অবৈধভাবে হজে অংশ নেন, তাঁরা এই ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যান। ফলে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দেয়। গত বছরের দুর্ঘটনা এই সমস্যার গুরুত্ব আরও তুলে ধরেছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা হজকে আরও নিরাপদ ও সংগঠিত করার জন্য একটি লজিস্টিক পদক্ষেপ।

অবৈধ কর্মসংস্থানের সমস্যা

এই নিষেধাজ্ঞার আরেকটি কারণ হলো অবৈধ কর্মসংস্থান। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনেক বিদেশি ব্যবসায়িক বা পারিবারিক ভিসা ব্যবহার করে সৌদি আরবে প্রবেশ করে অনুমোদন ছাড়া কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। এটি ভিসা নিয়ম লঙ্ঘন করার পাশাপাশি শ্রমবাজারে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করতেও এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সৌদি মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস

সৌদি আরবের (saudi arabia) হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের সঙ্গে কূটনৈতিক উদ্বেগের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কেবলমাত্র একটি লজিস্টিক প্রতিক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য হজকে আরও নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করা। মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

Advertisements

নিয়ম লঙ্ঘনের শাস্তি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ প্রভাবিত ভ্রমণকারীদের নতুন নিয়ম মেনে চলতে বলেছে। যাঁরা এই আদেশ লঙ্ঘন করবেন, তাঁদের ভবিষ্যতে পাঁচ বছরের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হতে পারে। এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়ম মান্যতা নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে।

যেসব ভিসা প্রভাবিত হয়নি

এই নিষেধাজ্ঞা কূটনৈতিক ভিসা, রেসিডেন্সি পারমিট এবং হজের জন্য নির্দিষ্ট ভিসার উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এই ভিসাগুলি যথারীতি ইস্যু করা হবে এবং ব্যবহার করা যাবে। হজ ২০২৫-এর মরসুম নির্ধারিত হয়েছে ৪ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত।

ভারত ও বাংলাদেশের প্রভাব

ভারত এবং বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ হজ ও উমরাহর জন্য সৌদি আরব যান। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেকের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে, যাঁরা ইতিমধ্যে উমরাহ ভিসা পেয়েছেন, তাঁরা ১৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। ভারতের হজ কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে তীর্থযাত্রীদের সতর্ক করেছে এবং সঠিক নিবন্ধনের পরামর্শ দিয়েছে।

অতীতের ঘটনা ও শিক্ষা

২০২৪ সালের হজে অবৈধ তীর্থযাত্রীদের কারণে সৃষ্ট ভিড় এবং গরমে ১,২০০ জনের মৃত্যু সৌদি কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন এমন ব্যক্তিরা, যাঁরা সঠিক অনুমোদন ছাড়াই হজে অংশ নিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতি এড়াতে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্ত হজকে আরও নিরাপদ ও সংগঠিত করার একটি প্রয়াস। ভারত, বাংলাদেশ সহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। তীর্থযাত্রীদের জন্য পরামর্শ হলো, সঠিক নিবন্ধন এবং হজের জন্য নির্দিষ্ট ভিসার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া। এই পদক্ষেপ আগামী হজ মরসুমে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।