রাশিয়া ও ইউক্রেনের (russia-ukraine) প্রতিনিধি দলগুলো সোমবার (২ জুন, ২০২৫) তুরস্কের ইস্তানবুলে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে দ্বিতীয় দফায় সরাসরি শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হয়েছে। তবে, উভয় পক্ষের মধ্যে মূল শর্তগুলোর উপর গভীর মতপার্থক্য থাকায় এই আলোচনা থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হচ্ছে।
আলোচনায় কারা অংশ নিয়েছেন
ইউক্রেনের (russia-ukraine) প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের নেতৃত্বে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহযোগী ভ্লাদিমির মেদিনস্কির নেতৃত্বে রাশিয়ান প্রতিনিধি দল এই আলোচনায় অংশ নিয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করছেন, এবং তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ইউক্রেনের (russia-ukraine) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিওর্হি তিখি ইউক্রেনীয় দূতাবাসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি বার্তায় জানিয়েছেন যে, উমেরভের নেতৃত্বে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল ইস্তানবুলে এই বৈঠকের জন্য উপস্থিত হয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ান (russia-ukraine) রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মেদিনস্কির নেতৃত্বে রাশিয়ান প্রতিনিধি দল রবিবার সন্ধ্যায় ইস্তানবুলে পৌঁছেছে। তুরস্কের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল, তবে তিখি বলেছেন যে এটি দুপুর ১২টায় শুরু হবে। এই সময়ের অসঙ্গতি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো স্পষ্টীকরণ পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধ বন্ধের মূল শর্ত নিয়ে দূরত্ব
উভয় দেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে জানা যায়, যুদ্ধ বন্ধের মূল শর্ত নিয়ে তাদের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার (৬২০ মাইল) দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনে তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে, এবং উভয় পক্ষ একে অপরের ভূখণ্ডে গভীর হামলা চালিয়েছে। রবিবার (১ জুন, ২০২৫), ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রাশিয়ার অভ্যন্তরে ৪০টিরও বেশি রাশিয়ান বিমান ধ্বংস হয়েছে।
এদিকে, রাশিয়ার (russia-ukraine) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাতের বেলা আটটি রাশিয়ান অঞ্চল এবং রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের উপর ১৬২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার ছোঁড়া ৮০টি ড্রোনের মধ্যে ৫২টি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
খারকিভে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা (russia-ukraine)
সোমবার সকালে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরের একটি আবাসিক এলাকায় দুটি ব্যালিস্টিক মিসাইল আঘাত হানে। খারকিভের মেয়র ইহোর তেরেখভ জানিয়েছেন, একটি মিসাইল একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের কাছে এবং অপরটি একটি স্কুলের কাছে রাস্তায় আঘাত হানে, যার ফলে একটি বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। তিনি এই হামলার ছবিও প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, দক্ষিণাঞ্চলের খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ান বাহিনীর গোলাবর্ষণে তিনজন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন শিশু। জাপোরিঝিয়া শহরের কাছে মিসাইল হামলা এবং গোলাবর্ষণে পাঁচজন নিহত এবং নয়জন আহত হয়েছেন।
প্রথম দফার আলোচনার ফলাফল
গত ১৬ মে ইস্তানবুলে (russia-ukraine) প্রথম দফার শান্তি আলোচনা মাত্র দুই ঘণ্টারও কম সময়ে শেষ হয়েছিল। তবে, উভয় পক্ষ ১,০০০ জন করে যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল, যার তারিখ নির্ধারিত হলেও প্রকাশ করা হয়নি। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ এই বিনিময়কে একটি “গুরুত্বপূর্ণ অর্জন” হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
তিনি বলেছেন, আলোচনার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা, তবে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি হয়নি। উমেরভ আরও জানিয়েছেন, তাদের তৃতীয় লক্ষ্য হলো উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনা, যার পরবর্তী ধাপ হিসেবে তিনি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং পুতিনের মধ্যে সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন। রাশিয়া এই প্রস্তাব “লক্ষ্য করেছে” বলে জানিয়েছে।
রাশিয়ার দাবি ও ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান মেদিনস্কি বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “মূল কারণগুলো দূর করতে” চান। তিনি এই আলোচনাকে ২০২২ সালের ব্যর্থ আলোচনার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন, যখন ইস্তানবুলে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল।
তবে, ইউক্রেনের শীর্ষ উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক জানিয়েছেন, রাশিয়া (russia-ukraine) এই আলোচনায় ইউক্রেনের অ-দখলকৃত অঞ্চল ত্যাগ, সার্বভৌমত্ব পরিত্যাগ, জোট থেকে সরে আসা এবং অস্ত্রশিল্প ও পশ্চিমা অস্ত্র পরিত্যাগের মতো “অগ্রহণযোগ্য” দাবি উত্থাপন করেছে। তিনি রাশিয়ান প্রতিনিধিদের ২০২২ সালের মতো “অহংকারী” আচরণের জন্য সমালোচনা করেছেন।
তুরস্কের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক চাপ
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই আলোচনার সুবিধার্থী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বৈঠকের শুরুতে উভয় পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন, জোর দিয়ে বলেছেন যে যুদ্ধবিরতি “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব” প্রয়োজন।
তিনি যুদ্ধবন্দী বিনিময়কে একটি “আস্থা-নির্মাণের পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং জানিয়েছেন, উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে আবার বৈঠক করতে সম্মত হয়েছে। তুরস্ক ছাড়াও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য মস্কো ও কিয়েভের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব” সাক্ষাতের কথা বলেছেন।
2025 Kawasaki Z900 একগুচ্ছ নতুন ফিচার সহ বাজারে এল, মুগ্ধ করবে ডিজাইন
ইউক্রেনের শান্তির শর্ত
ইউক্রেনের (russia-ukraine) প্রস্তাবিত শান্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, “সবার বিনিময়ে সবাই” যুদ্ধবন্দী বিনিময়, জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠক, ইউক্রেনীয় বাহিনীর উপর কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকা, রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং রাশিয়ার ক্ষতিপূরণ প্রদান। তবে, রাশিয়ার দাবিগুলো ইউক্রেনের জন্য অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে, যা আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে।
ইস্তানবুলে দ্বিতীয় দফার শান্তি আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, উভয় পক্ষের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য এবং সাম্প্রতিক সামরিক হামলা শান্তির সম্ভাবনাকে ম্লান করেছে। তুরস্কের মধ্যস্থতা এবং আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও, আলোচনা থেকে তাৎক্ষণিক ফলাফলের আশা কম। যুদ্ধবিরতি এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তির জন্য উভয় পক্ষের আরও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ প্রয়োজন।