কিয়েভ: ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ আবারও রুশ ড্রোন হামলায় রক্তাক্ত। রবিবার ভোররাতে রাশিয়া ১০১টি ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়, যার মধ্যে অন্তত পাঁচটি ড্রোন রাজধানী কিয়েভে আঘাত হানে। নিহত হন তিনজন সাধারণ নাগরিক, আহত ২৯ জন, যাদের মধ্যে সাতজন শিশু। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক ১৯ বছরের তরুণী এবং তাঁর ৪৬ বছর বয়সী মা।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকো জানিয়েছেন, রুশ ড্রোন হামলায় কিয়েভের দেসনিয়ানস্কি জেলায় দুটি বহুতল আবাসনে আগুন ধরে যায়। একটি নয়তলা ও আরেকটি ষোলোতলা ভবনে আগুন লাগার পর দ্রুত স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে এবং বহু মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায়।
EICMA 2025-এ আসন্ন চারটি নতুন বাইকের নাম প্রকাশ করল Norton
ঘটনার সময় ৭৪ বছর বয়সী ওলহা ইয়েভহেনিভহা নিজের ফ্ল্যাটে আটকা পড়েছিলেন। তিনি জানান, “ধোঁয়ায় ঘর ভরে গিয়েছিল, জানলা কালো হয়ে গিয়েছিল। নিচে নামা সম্ভব ছিল না। তাই দরজা ও বারান্দায় ভেজা কম্বল দিয়ে আটকে রেখেছিলাম, যেন ধোঁয়া ঢুকতে না পারে।”
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রাতভর ১০১টি ‘শাহেদ’ সিরিজের ড্রোন পাঠিয়েছিল, যার মধ্যে ৯০টি ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ড্রোনগুলির আঘাতে কিয়েভ-সহ ইউক্রেনের চারটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটে।
ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আরও পাঁচটি এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি টানা দ্বিতীয় দিন যখন রুশ হামলায় কিয়েভে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শনিবারও একাধিক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় চারজন নিহত হন, তাঁদের মধ্যে দুইজন ছিলেন কিয়েভের বাসিন্দা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আবারও পশ্চিমা দেশগুলির কাছে আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি ধ্বংস হওয়া ড্রোন আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে প্রকাশ করে। যদি যথাযথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকত, এই প্রাণহানি এড়ানো যেত।”
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রবিবার জানিয়েছেন, রাশিয়া একটি নতুন পারমাণবিক সক্ষম ও শক্তিচালিত ক্রুজ মিসাইল পরীক্ষা করেছে, যা বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়েছে, কারণ এটি রাশিয়ার সামরিক কৌশলে এক নতুন মাত্রা যোগ করছে।
কিয়েভের দেসনিয়ানস্কি জেলায় এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। বহু ভবনে আগুনের ছাপ, পুড়ে যাওয়া গাড়ি ও ভাঙা কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। শহরের রাস্তায় ধোঁয়ার গন্ধ, মানুষের চোখে আতঙ্ক। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আকাশে সাইরেন বেজে ওঠে। জানি না কখন মৃত্যু নেমে আসবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলাগুলি কেবল সামরিক কৌশল নয়, বরং ইউক্রেনের নাগরিক সমাজকে মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে, এবং তারা রাশিয়ার প্রতিটি আগ্রাসনের জবাব দেবে। যুদ্ধের ৩য় বর্ষে দাঁড়িয়ে ইউরোপের এই সংঘাত ক্রমশই মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হচ্ছে। কিয়েভের ধ্বংসস্তূপের মাঝে আজ একটাই প্রতিধ্বনি “আমরা বাঁচতে চাই।”


