ANSWER পাচ্ছে CANCER! কয়েক মাসের মধ্যেই আসছে ক্যান্সারের ভ্যাকসিন

আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি অভূতপূর্ব খবর শোনা গেছে যা বিশ্বের মানুষের জীবনকে বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তিগতকৃত ক্যান্সার…

A vial of the ovarian cancer vaccine

আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি অভূতপূর্ব খবর শোনা গেছে যা বিশ্বের মানুষের জীবনকে বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তিগতকৃত ক্যান্সার (Cancer) ভ্যাকসিনের মানব পরীক্ষা শুরু করতে চলেছে, এবং এই পরীক্ষা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হতে পারে। এই খবরটি শুধুমাত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্যই নয়, বরং মানবজাতির স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি বিরাট আশার আলো হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার এই উদ্যোগটি বিশেষভাবে তাদের mRNA প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে, যা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনে সফলতার পর তাদের জন্য একটি পরিচিত ক্ষেত্র।

ক্যান্সারের (Cancer) বিরুদ্ধে নতুন আশা

ক্যান্সার বিশ্বের অন্যতম বড় হত্যাকারী রোগ হিসেবে গণ্য হয়। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগের শিকার হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার এই নতুন ভ্যাকসিনের পরীক্ষা একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ হতে পারে। রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিনটি ব্যক্তিগতকৃত করার পরিকল্পনা করেছেন, যার মানে প্রতিটি রোগীর টিউমারের জিনগত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে প্রতিটি রোগীর টিউমারের মধ্যে নিউঅ্যান্টিজেন (neoantigens) চিহ্নিত করা হবে, যা ক্যান্সার (Cancer) কোষগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করবে। রাশিয়ার সরকারি মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন খরচ প্রতি ডোজে প্রায় ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়েছে, যা এই প্রযুক্তির জটিলতা এবং ব্যক্তিগতকৃত স্বরূপের কারণে যৌক্তিক বলে মনে করা হচ্ছে।

   

রাশিয়ার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
রাশিয়া এই ভ্যাকসিনের উন্নয়নে গামালেয়া জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের মতো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই কেন্দ্রটি আগে স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন তৈরিতে সফল হয়েছিল, যা কোভিড-১৯ মহামারীর সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে, স্পুটনিক ভি-র ক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন ও সমালোচনা উঠেছিল, বিশেষ করে পরীক্ষার ডেটার স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাশিয়া এবার ক্যান্সার (Cancer) ভ্যাকসিনের মানব পরীক্ষায় আরও সতর্ক এবং সফল হওয়ার চেষ্টা করছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় এই ভ্যাকসিন টিউমারের বৃদ্ধি ও মেটাস্ট্যাসিস (ক্যান্সারের বিস্তার) রোধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, যা আশার কারণ হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি অভূতপূর্ব খবর শোনা গেছে যা বিশ্বের মানুষের জীবনকে বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তিগতকৃত ক্যান্সার (Cancer) ভ্যাকসিনের মানব পরীক্ষা শুরু করতে চলেছেরাশিয়ার এই উদ্যোগ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় একটি আলাদা দিক নির্দেশ করে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ২০২৫ সালে একটি ফেজ ১ পরীক্ষায় mRNA ভ্যাকসিন autogene cevumeran ব্যবহার করে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে T-কোষের কার্যকারিতা চার বছর ধরে টিকে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্রিটেনের বায়োনটেকের সঙ্গে ২০২৩ সালে একটি চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে ব্যক্তিগতকৃত ক্যান্সার (Cancer) ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ভ্যাকসিন যদি সফল হয়, তবে তা বিশ্ববাজারে একটি প্রতিযোগিতামূলক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। তবে, উচ্চ খরচের কারণে এটি সাধারণ মানুষের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য হওয়া কঠিন হতে পারে, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

Advertisements

ভারতের দৃষ্টিকোণ
ভারতের ক্ষেত্রে এই খবরটি বিশেষ আকর্ষণীয়, কারণ ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। অনেক ভারতীয় বিশ্লেষক মনে করছেন যে, রাশিয়া যদি এই প্রযুক্তি ভাগ করে নেয়, তবে ভারতের ক্যান্সার রোগীদের জন্য সস্তা চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, এবং এর মধ্যে অনেকের জন্য উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
তবে, এই ভ্যাকসিনের পথে কিছু বাধা রয়েছে। প্রথমত, মানব পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি, এবং সেগুলোর স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিরা এই নতুন প্রতিযোগিতাকে গ্রহণ করতে সম্মত হবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তৃতীয়ত, খরচের বিষয়টি বড় সমস্যা হতে পারে, যদিও রাশিয়া জানিয়েছে যে তাদের নাগরিকদের জন্য এটি বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।

রাশিয়ার এই ক্যান্সার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা যদি সফল হয়, তবে তা মানবজাতির জন্য একটি নতুন আলো হবে। ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হতে পারে। তবে, এই প্রযুক্তির সফলতা নির্ভর করবে পরীক্ষার ফলাফল, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং খরচ কমানোর উপর। ভারতের মতো উদীয়মান দেশগুলোর জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে যদি তারা রাশিয়ার সঙ্গে সঠিক সহযোগিতা গড়ে তোলে। আগামী দিনগুলোতে এই ভ্যাকসিনের ফলাফল কী হবে, তা দেখে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই—কিন্তু আশা করা যায়, এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে একটি নতুন যুগের শুরু হবে।