রাশিয়ার সরকারের একটি অভাবনীয় উদ্যোগ (Russia government initiative) নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বব্যাপী। দেশের জন্মহার কমে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে এবং ভবিষ্যতে আর্থসামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখতে “যৌন মন্ত্রক” চালু করার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। তাদের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল জনগণকে সন্তানধারণে উৎসাহিত করা, পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা।
কেন এই উদ্যোগ?
গত কয়েক দশকে, রাশিয়ায় জন্মহারের নাটকীয় পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, আধুনিক জীবনের কর্মব্যস্ততা, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তসহ আরও নানা কারণে রাশিয়ার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সন্তানের সংখ্যা বাড়ানোর ঝোঁক কমছে। রাশিয়া আগে থেকেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দেশ, কিন্তু জনসংখ্যা হ্রাস পেলে অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব হতে পারে মারাত্মক। দেশের জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে, যৌন মন্ত্রক প্রণয়নের পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে।
যৌন মন্ত্রকের প্রধান উদ্দেশ্য হবে, প্রজননের হার বাড়াতে এবং সন্তানধারণে সহায়তা প্রদান করা। এর অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, যৌনতা ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রচার চালানো হবে। বিভিন্ন ধরনের উদ্বুদ্ধকরণমূলক কর্মসূচি ও পরিষেবা দেওয়ার চিন্তাভাবনাও করছে এই মন্ত্রক।
যৌন মন্ত্রকের উদ্যোগের সম্ভাব্য প্রভাব
এই উদ্যোগটি মূলত শিক্ষামূলক প্রচেষ্টা নিয়ে তৈরি। মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি, সম্পর্ককে সুদৃঢ় করা, এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের সন্তানধারণের বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সম্ভাব্য উদ্যোগগুলোতে থাকবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পরিবার পরিকল্পনা, এবং আর্থিক সহায়তা নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি।
রাশিয়ার এই পরিকল্পনার প্রতি দেশের মধ্যে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রতিক্রিয়াই রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে এটি দেশের জন্মহার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে কিছু মানুষ এই উদ্যোগকে ব্যক্তিগত বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
ভারতেও কি এমন উদ্যোগ প্রয়োজন?
ভারতের পরিস্থিতি রাশিয়ার থেকে অনেকটাই ভিন্ন। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে ইতোমধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেখানে রাশিয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে চায়, সেখানে ভারতকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দেশের অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ভারসাম্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে ভারতের ক্ষেত্রে “যৌন মন্ত্রক” প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী মন্ত্রক তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
ভারতে এমন উদ্যোগ চালু হলে তা জন্মহার কমাতে সহায়ক হতে পারে, যেমন সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা, এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে।
রাশিয়ার এই “যৌন মন্ত্রক” স্থাপনের পরিকল্পনা বিশ্বে নতুন এক আলোচনার সূচনা করেছে। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করা হয়তো সম্ভব। তবে এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে কিভাবে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও অংশগ্রহণের ওপর।