সাম্প্রতিক বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ার (Russia) ইরানের প্রতি তার সীমাবদ্ধ সহায়তা ও সহযোগিতা উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে দেখছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের একটি সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তিনি জানান যে, ইসরায়েলে বসবাসকারী রাশিয়ান ভাষাভাষী জনসংখ্যার কারণে রাশিয়া ইরানের পাশে সম্পূর্ণভাবে দাঁড়াতে পারেনি। এই বিবৃতি বিশ্ব রাজনীতির জটিলতা ও ভৌগোলিক সীমানার অতীত সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েলে বর্তমানে প্রায় ১৩ লক্ষ রাশিয়ান ভাষাভাষী ব্যক্তি বসবাস করছেন, যা ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫%। এই জনসংখ্যার মধ্যে অনেকেই সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে অভিবাসী হিসেবে এসেছেন। এই সম্প্রদায়ের উপস্থিতি রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করেছে। পুতিনের মতে, এই বন্ধন রাশিয়ার বিদেশনীতির উপর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উপস্থিতির ক্ষেত্রে।
রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে একটি ব্যাপক স্ট্র্যাটেজিক অংশীদারিত্ব রয়েছে, যা সামরিক, অর্থনৈতিক ও পারমাণবিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে ইসরায়েলের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কও উষ্ণ, বিশেষ করে রাশিয়ান অভিবাসীদের কারণে। ইসরায়েলে রাশিয়ান ভাষাভাষীদের উপস্থিতি রাশিয়ার জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংযোগ সৃষ্টি করেছে, যা রাশিয়ার ইরানের প্রতি সমর্থনকে সীমাবদ্ধ করে।
পুতিনের বিবৃতিতে উল্লেখিত হয়েছে যে, ইসরায়েলে রাশিয়ান ভাষাভাষীদের সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষা করা রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে, রাশিয়া ইরানের পাশে সম্পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর পরিবর্তে একটি ভারসাম্যবোধ অবলম্বন করেছে। এই ভারসাম্যবোধ রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বজায় রাখার একটি কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরেকটি কারণ হলো ইসরায়েলের সাথে তার পারমাণবিক সহযোগিতা। রাশিয়া ইরানের বুশেহরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে, যেখানে রাশিয়ান প্রকৌশলী ও কর্মীদের উপস্থিতি রয়েছে। ইসরায়েলের সাথে চলমান সংঘাতের ক্ষেত্রে এই কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাশিয়ার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। পুতিনের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এই কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণে গভীর। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে রাশিয়ার ভূমিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে রাশিয়ার ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বন্ধন ইসরায়েলের সাথে তার সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলে, যা ইরানের প্রতি তার সমর্থনকে সীমাবদ্ধ করে।
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন। ইরানের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তকে এক ধরণের বিরোধিতা হিসেবে দেখা হয়, যখন ইসরায়েল এই সিদ্ধান্তকে রাশিয়ার বুদ্ধিমান রাজনীতির একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করে।
সামগ্রিকভাবে, রাশিয়ার ইরানের প্রতি তার সীমাবদ্ধ সহায়তা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণগুলির উপর নির্ভর করে। ইসরায়েলে রাশিয়ান ভাষাভাষীদের উপস্থিতি রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করেছে, যা তার বিদেশনীতির উপর প্রভাব ফেলে। এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে রাশিয়ার ভূমিকাকে আরও জটিল করে তোলে।