Monday, December 8, 2025
HomeWorldভারতের পর আফগানিস্তানে পৌঁছল রাশিয়ার তেল ট্যাঙ্কার

ভারতের পর আফগানিস্তানে পৌঁছল রাশিয়ার তেল ট্যাঙ্কার

- Advertisement -

হেরাত: দীর্ঘদিনের যুদ্ধ, অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও আফগানিস্তানের বাণিজ্যযাত্রা থেমে নেই (Russia Afghanistan fuel train Herat)। বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি নতুনভাবে তাদের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। তারই বড় প্রমাণ রাশিয়া থেকে সরাসরি জ্বালানি বোঝাই একটি ট্রেন এসে পৌঁছেছে হেরাত প্রদেশে। এই ঘটনাকে আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাশিয়া থেকে আসা এই জ্বালানি ট্রেনে রয়েছে ডিজেল ও পেট্রোলসহ বিভিন্ন ধরনের ফুয়েল যা আফগানিস্তানের অর্থনীতি, পরিবহণ এবং শিল্পক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি পাকিস্তানের মাধ্যমে জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই পথ বারবার রাজনৈতিক চাপ ও সামরিক শাসনের কৌশলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে নতুন বিকল্প পথ খুঁজছিল আফগানিস্তান। রাশিয়ার সঙ্গে এই নতুন রেল-বাণিজ্য সেই প্রতীক্ষারই বাস্তব রূপ।

   

ফের স্বপ্নভঙ্গ লাল-হলুদের, টাইব্রেকারে বাজিমাত গোয়ার

ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তানের (IEA) বাণিজ্য দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে “পারস্পরিক সম্মান ও পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে বিশ্বের প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ।” এই রাশিয়া-আফগানিস্তান রেল ট্রেড সেই নীতিরই বাস্তব প্রকাশ। আফগান প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়াও নতুন বাণিজ্য সহযোগী খুঁজছে। ফলে আফগানিস্তানের মতো দ্রুত-বর্ধনশীল বাজার তাদের কাছে একটি কৌশলগত সুযোগ।

অন্যদিকে, আফগান ব্যবসায়ী সমাজ এই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁদের মতে, পাকিস্তান হয়ে বাণিজ্য করার যে পুরনো নিয়ম ছিল, এখন তার আর প্রয়োজন নেই। এক বাণিজ্যিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, “পাকিস্তান বারবার আমাদের পণ্যের ওপর কৃত্রিম বাধা দিয়েছে। কখনও সীমান্ত বন্ধ, কখনও কর বৃদ্ধি এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখন সেই নির্ভরশীলতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসছি।”

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পাকিস্তানের বর্তমান সামরিক শাসন বহুবার আফগান বাণিজ্যকে রাজনৈতিক চাপে ফেলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান–আফগান সম্পর্কের টানাপোড়েন যতই বেড়েছে, ততই বাণিজ্যপথকে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে।

সীমান্তে ট্রাক আটকে দেওয়া, পণ্যের শুল্ক বাড়ানো, কিংবা হঠাৎ রফতানি নিষিদ্ধ করা এসবই দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তানের বাণিজ্যক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করেছে। তারই জবাবে আফগান ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন রুট খুঁজতে শুরু করেন যার মধ্যে ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মাধ্যমে রুট অন্যতম। রাশিয়ার সঙ্গে এই সরাসরি রেল সংযোগ সেই বিকল্প পথ তৈরির বড় মাইলফলক।

হেরাতে পৌঁছানো রুশ জ্বালানি ট্রেনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই স্থানীয় অর্থনীতিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, জ্বালানির দাম কমতে পারে, পরিবহণ খরচ কমবে এবং শিল্পকারখানার উৎপাদনও বাড়বে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার সঙ্গে এই রেল চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে ইসলামিক এমিরেট বারবার বলছে তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি রাজনৈতিক নয়, বরং সম্পূর্ণ বাস্তবমুখী। দেশের বাজারকে স্থিতিশীল করা, জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মানুষকে কর্মসংস্থান দেওয়া এই তিনটিই সরকারের মূল লক্ষ্য। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে এই বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বিস্তৃত হবে বলেই ধারণা।

সবমিলিয়ে, রাশিয়া থেকে আসা এই বিশেষ জ্বালানি ট্রেন শুধু একটি বাণিজ্যিক ঘটনা নয় এটি আফগানিস্তানের নতুন ভূরাজনৈতিক অবস্থানের প্রতীকও বটে। যেখানে পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর পথেই হাঁটছে কাবুল।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular