একদিনে রেকর্ড বিক্রি ১০০০ গোল্ড কার্ড, প্রভাব মার্কিন অৰ্থনীতিতে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ‘গোল্ড কার্ড’ (gold card usa) বা ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রকল্প, যা ৫০ লক্ষ ডলারে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ এবং ঐচ্ছিক নাগরিকত্ব…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/trump-3.jpg

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ‘গোল্ড কার্ড’ (gold card usa) বা ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রকল্প, যা ৫০ লক্ষ ডলারে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ এবং ঐচ্ছিক নাগরিকত্ব প্রদান করে, তা যদি মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের দাবি সত্যি হয়, তবে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা যাচ্ছে। লুটনিক জানিয়েছেন, তিনি একদিনে ১০০০টি ‘গোল্ড কার্ড’ বিক্রি করেছেন এবং এর জন্য মানুষ লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছে। তিনি আরও বলেছেন, এই প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে “আরও দুই সপ্তাহের মধ্যে” চালু হবে। তিনি ‘অল-ইন পডকাস্ট’-এ বলেন, “ইলন মাস্ক এখন এর সফটওয়্যার তৈরি করছেন, এবং এটি প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে চালু হবে… এবং গতকালই আমি এক হাজারটি বিক্রি করেছি।”

এই প্রকল্পটি গত ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন। লুটনিকের দাবি অনুযায়ী, একদিনে ১০০০টি কার্ড বিক্রি হওয়ায় মার্কিন অর্থনীতিতে ৫০০ কোটি ডলার (৫ বিলিয়ন ডলার) যোগ হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ধনী বিদেশিদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা দেশের জাতীয় ঋণ কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘গোল্ড কার্ড’ কীভাবে কাজ করবে?

   

লুটনিক পডকাস্টে ব্যাখ্যা করেছেন, “আপনি যদি মার্কিন নাগরিক হন, তাহলে আপনাকে বিশ্বব্যাপী আয়ের উপর কর দিতে হবে। তাই বিদেশিরা
নিশ্চিতভাবেই এই কর এড়াতে নাগরিকত্ব গ্রহণ করবে না। কিন্তু ‘গোল্ড কার্ড’ বা গ্রিন কার্ডের মাধ্যমে তারা আমেরিকায় স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবেন, কর ছাড়াই। তারা নাগরিকত্ব নিতে পারেন, কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই কার্ডের মাধ্যমে তাদের আমেরিকায় স্থায়ীভাবে থাকার অধিকার থাকবে। তারা যখন খুশি এখানে আসতে পারবেন। এর জন্য তাদের ৫০ লক্ষ ডলার দিতে হবে। তাদের যাচাই-বাছাই করা হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় তারা আইন মান্যকারী ভালো মানুষ। যদি তারা কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তবে এই কার্ড বাতিল করা যাবে।”

Advertisements

লুটনিক একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝান, “যদি আমি আমেরিকান না হতাম এবং অন্য কোনো দেশে থাকতাম, তবে আমি ৬টি গোল্ড কার্ড কিনতাম—একটি আমার জন্য, একটি আমার স্ত্রীর জন্য এবং আমার চার সন্তানের জন্য। কারণ, যদি কোনো দুর্যোগ ঘটে, আমি চাইব আমার কাছে আমেরিকায় যাওয়ার বিকল্প থাকুক।

আমি শুধু বিমানবন্দরে গিয়ে আমেরিকায় উড়ে যেতে পারব, এবং তারা আমাকে ‘বাড়িতে’ স্বাগত জানাবে। আমি নিরাপদে আমেরিকায় পৌঁছে আমার জীবন আবার শুরু করতে পারব—ব্যবসা করতে পারব বা যা খুশি তাই করতে পারব। আর বিদেশে তাদের উপার্জিত অর্থের উপর কোনো কর দিতে হবে না, শুধু আমেরিকায় থাকাকালীন যা আয় করবেন, তার উপর কর দিতে হবে। এটাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।”

আরো দেখুন মুম্বইয়ের ধারাবিতে গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাকে ভয়াহ আগুন

সম্ভাব্য প্রভাব ও পরিকল্পনা
লুটনিক জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (৩৭০ লক্ষ) মানুষ এই গোল্ড কার্ড কেনার সামর্থ্য রাখেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ লক্ষ কার্ড বিক্রি করা সম্ভব। এই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বা অর্থনৈতিক ঘাটতি কমাতে ব্যবহৃত হবে। বর্তমানে মার্কিন জাতীয় ঋণ ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেই বোঝা কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প এই প্রকল্প ঘোষণার সময় বলেছিলেন, গোল্ড কার্ড বিক্রির সংখ্যার উপর কোনো বার্ষিক সীমা থাকবে না। লুটনিকের দাবি যদি সত্য হয়, তবে একদিনে ১০০০টি কার্ড বিক্রি—অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় ৫০০ কোটি ডলার—এই প্রকল্পের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক সূচনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

প্রশ্ন ও সমালোচনা
যদিও লুটনিকের দাবি উৎসাহব্যঞ্জক, তবে এই প্রকল্প এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি। এটি কংগ্রেসের অনুমোদন এবং আইনি প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করতে পারে। এছাড়া, এই ধরনের প্রকল্পের সমালোচনাও উঠতে পারে, যেমন—এটি কি শুধুমাত্র ধনীদের জন্য আমেরিকার দরজা খুলে দিচ্ছে? এটি কি সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী? তবে ট্রাম্প ও লুটনিকের মতে, এই প্রকল্প ধনী ও সফল ব্যক্তিদের আমেরিকায় আকৃষ্ট করবে, যারা এখানে ব্যয় করবে, কর দেবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জানতে আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটি যদি সত্যিই সফল হয়, তবে এটি মার্কিন অভিবাসন নীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।