“চাপের কাছে মাথা নত নয়”: রুশ তেল সংস্থার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তীব্র প্রতিক্রিয়া পুতিনের

Putin US Sanctions Warning

মস্কো: রুশ তেল সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে নতুন করে তপ্ত হল মস্কো-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। বৃহস্পতিবার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করলেন, কোনও শক্তির চাপেই রাশিয়া কখনও মাথা নত করবে না। সতর্ক বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, রুশ ভূখণ্ডের গভীরে হামলার চেষ্টা হলে তার জবাব হবে “অত্যন্ত কঠোর এবং ধ্বংসাত্মক”।

Advertisements

হুমকির মুখে সিদ্ধান্ত নয়

“এটি রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করার একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা,” মন্তব্য পুতিনের। “কোনও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন দেশ বা জনগণ কখনও হুমকির মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না।” মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে তিনি ‘শত্রুতামূলক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করে বলেন, এতে রুশ-আমেরিকা সম্পর্ক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই কড়া প্রতিক্রিয়া আসে একদিন পর, যখন মার্কিন প্রশাসন রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল সংস্থা, রসনেফট (Rosneft) ও লুকঅয়েল (Lukoil)—এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতরের Office of Foreign Assets Control (OFAC) জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর তহবিলের উৎস রুদ্ধ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ছায়ায় পরমাণু মহড়া ও কূটনৈতিক উত্তাপ Putin US Sanctions Warning

রাশিয়া এই ঘোষণার পরই ব্যাপক পরমাণু অনুশীলন চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এর ঠিক একদিন আগেই ওয়াশিংটন দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষ বৈঠক স্থগিত করে।

হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, “এগুলো বিশাল নিষেধাজ্ঞা—রাশিয়ার দুটি বড় তেল সংস্থার বিরুদ্ধে। আশা করি, যুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে এবং এই নিষেধাজ্ঞাগুলি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।”
রসনেফট রাষ্ট্রায়ত্ত শক্তি সংস্থা, যা অনুসন্ধান, শোধন ও আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্যে সক্রিয়। অন্যদিকে, লুকঅয়েল একটি বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থা, যা রাশিয়া ও বিদেশে তেল-গ্যাস উৎপাদন, বিপণন ও বিতরণে যুক্ত।

“জ্বালানি বাজারে ভারসাম্য নষ্টের আশঙ্কা”

পুতিন সতর্ক করে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক জ্বালানি ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি ইঙ্গিত দেন, এমন পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজের কাছেও রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে—বিশেষত দেশটির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী ক্যালেন্ডারের প্রেক্ষিতে।

Advertisements

দীর্ঘপাল্লার টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতেও হুঁশিয়ারি

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পাল্লার টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও পুতিন কড়া সতর্কতা জারি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এটি নিছক উস্কানিমূলক পদক্ষেপ। রুশ ভূখণ্ডে যদি এই অস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা হয়, প্রতিক্রিয়া হবে অত্যন্ত কঠোর, সম্ভবত বিধ্বংসীও। তারা যেন বিষয়টি ভেবে দেখে।”

‘রাশিয়ান তেল’ এখন ট্রাম্পের লক্ষ্যবিন্দুতে

রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতি স্তব্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবার নজর দিয়েছেন রুশ তেল আমদানিকারী দেশগুলির দিকে। চিন ও ভারত—দু’দেশই রাশিয়ার প্রধান ক্রেতা। ট্রাম্প চীনা আমদানির ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বিদ্যমান ১৫৫ শতাংশ করের ওপরে। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

চিন পাল্টা পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেও, ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে—জাতীয় স্বার্থে রুশ তেল আমদানি অব্যাহত থাকবে। তবে কূটনৈতিক মহলে গুঞ্জন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে ১৫–১৬ শতাংশে আনতে পারে, বিনিময়ে নয়াদিল্লি রুশ তেল আমদানি সীমিত করার কথা ভাবতে পারে।

তবুও, বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরোপিত এসব ‘বৃহৎ অর্থনৈতিক চাপ’ এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত ফল দেয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এখনও অনিশ্চিত, আর ক্রেমলিনের অবস্থান—অবিচল ও অপ্রতিরোধ্য।