প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ! সীমান্তে জারি হাই অ্যালার্ট

নেপালে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জেন-জি বিক্ষোভের জেরে ভারত-নেপাল সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে (Prime Minister Resignation)। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি মঙ্গলবার পদত্যাগ…

Prime Minister Resignation

নেপালে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জেন-জি বিক্ষোভের জেরে ভারত-নেপাল সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে (Prime Minister Resignation)। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। দেশজুড়ে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এই বিক্ষোভ, যা প্রাথমিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল। এই বিক্ষোভ দ্রুত সরকারের দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে।

   

এই ঘটনার ফলে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তরাখণ্ড এবং সিকিমের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে।বিক্ষোভের পটভূমিনেপাল সরকার গত ৪ সেপ্টেম্বর ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যার মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব এবং এক্স অন্তর্ভুক্ত, নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

সরকারের দাবি ছিল, এই প্ল্যাটফর্মগুলি নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, বিক্ষোভকারীরা এই নিষেধাজ্ঞাকে সরকারের সমালোচনা ও সংগঠিত প্রতিবাদ দমনের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে নেপালের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন-জি , রাস্তায় নেমে আসে, যারা দুর্নীতি, নেপোটিজম এবং অর্থনৈতিক অসমতার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

সোমবার কাঠমান্ডু এবং অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা, যাদের মধ্যে অনেকেই স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরা তরুণ, পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হয় এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৩০০-এর বেশি আহত হয়। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করলেও, কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বর এলাকায় একজন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, এবং ইটাহারি ও দামাকেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ওলির বাসভবন, যোগাযোগ মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং-এর বাড়ি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে।প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগতীব্র চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন।

Advertisements

এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক নৈতিক কারণে পদত্যাগ করেছিলেন, কারণ পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর জন্য তিনি দায়বদ্ধতা অনুভব করেন। কৃষিমন্ত্রী রাম নাথ অধিকারিও সরকারের বিক্ষোভ দমনের নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।

ওলি একটি জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠকে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। তবে, এই পদক্ষেপ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে ব্যর্থ হয়, যারা ওলির পদত্যাগ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছিল।

নেপালের অস্থিরতার ফলে ভারত-নেপালের ১,৭৫১ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে শাস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) নজরদারি বাড়িয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বালরামপুর জেলায় ড্রোন নজরদারি এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করে নেপালে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

উত্তরবঙ্গ সফরের আগে কি বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর ?

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিলের কারণে দিল্লি থেকে ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটগুলি অবতরণ করতে বিলম্বের সম্মুখীন হয়েছে। এই বিক্ষোভকে ‘জেন-জি বিপ্লব’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে, যা নেপালের তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রকাশ। সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা ছিল শুধুমাত্র একটি স্ফুলিঙ্গ; মূল সমস্যা হল দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন।