অস্থিরতা বাড়ছে! আজই দেশ ছাড়তে পারেন প্রধানমন্ত্রী

নেপালের রাজনীতিতে আবারও একটি নতুন মোড় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে (Prime Minister)। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি সম্ভবত নেপাল ত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এই…

Prime Minister

নেপালের রাজনীতিতে আবারও একটি নতুন মোড় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে (Prime Minister)। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি সম্ভবত নেপাল ত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এই খবরটি নেপালের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের মধ্যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

কেপি শর্মা ওলি, যিনি কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট) বা সিপিএন-ইউএমএল-এর চেয়ারম্যান এবং ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি তার চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছেন। তবে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণে তার অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

   

নেপালের রাজনীতি গত কয়েক দশক ধরে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকে দেশটি ১৪টি সরকার দেখেছে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। কেপি শর্মা ওলি নিজেই এর আগে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন—২০১৫ থেকে ২০১৬, ২০১৮ থেকে ২০২১ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে।

তবে, তার প্রতিটি মেয়াদই দলীয় কোন্দল, জোট সরকারের অস্থিরতা এবং বিরোধী দলের চাপের মুখে পড়েছে।সাম্প্রতিক খবরে বলা হচ্ছে, ওলি সম্ভবত দেশ ত্যাগ করতে পারেন, যদিও এর পেছনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি তার স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হতে পারে। ওলি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন এবং ২০০৭ ও ২০২০ সালে দুইবার কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন।

২০১৯ সালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়েছিল। তবে, অন্যান্য সূত্র মনে করছে, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক চাপের ফলাফল হতে পারে।দলীয় কোন্দল এবং জোট সরকারের চ্যালেঞ্জওলির বর্তমান সরকার নেপালি কংগ্রেস এবং সিপিএন-ইউএমএল-এর জোটের ভিত্তিতে গঠিত।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে পুষ্প কমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’-এর নেতৃত্বাধীন সরকার ভোট অফ কনফিডেন্সে হেরে যাওয়ার পর ওলি পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। তিনি ১৮৮ ভোট পেয়ে সংসদে আস্থাভোটে জয়ী হন, যা নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে, এই জোট সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সিপিএন-ইউএমএল-এর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ওলির নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।সাম্প্রতিক সময়ে, প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ’র সমর্থকদের আন্দোলন এবং রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি নেপালের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ওলি এই আন্দোলনের জন্য ভারতের ভূমিকার অভিযোগ তুলেছেন, যা নেপাল-ভারত সম্পর্কের উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে।

Advertisements

তিনি এমনকি সংসদে ভারতের ভূমিকা ‘উন্মোচন’ করার হুমকি দিয়েছেন, যা তার রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলেছে।আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাওলির নেতৃত্বে নেপাল ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছে। তিনি ২০১৫ সালে ভারতের নেপাল অবরোধের বিরোধিতা করেছিলেন এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছিলেন।

২০২০ সালে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরার মতো বিতর্কিত অঞ্চলগুলো নিয়ে নেপালের মানচিত্র সংশোধন করে তিনি জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে কিছুটা প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। তবে, তার সাম্প্রতিক চীন সফর এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে ঋণ চুক্তি না করার ঘোষণা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উপর নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড ওলির এই ‘চীন কার্ড’ খেলার সমালোচনা করেছেন, যা নেপালের কূটনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।ওলির সম্ভাব্য দেশত্যাগের খবর নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ পাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি তার স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে চিকিৎসার জন্য বিদেশ সফর হতে পারে।

অন্যরা মনে করছেন, এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে তিনি অভ্যন্তরীণ চাপ থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি পেতে চাইছেন। নেপালের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ওলির এই পদক্ষেপ তার দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং জোট সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি কৌশল হতে পারে। কেপি শর্মা ওলির সম্ভাব্য দেশত্যাগ নেপালের রাজনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

ট্রাম্পের শুল্কের চাপেও অটুট দালাল স্ট্রিট: ভারতের শক্তি কারা?

তার নেতৃত্বে নেপাল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি যদি সত্যিই দেশ ত্যাগ করেন, তবে এটি নেপালের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ওলি কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন এবং নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়।