দীর্ঘ রোগভোগের লড়াইয়ের পর প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস

সোমবার সামাজিক মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে যে, পোপ ফ্রান্সিস (pope francis) ৮৮ বছর বয়সে নিজ বাসভবনে প্রয়াত হয়েছেন, এবং ভ্যাটিকান একটি ভিডিও বিবৃতির মাধ্যমে…

pope francis passes away

সোমবার সামাজিক মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে যে, পোপ ফ্রান্সিস (pope francis) ৮৮ বছর বয়সে নিজ বাসভবনে প্রয়াত হয়েছেন, এবং ভ্যাটিকান একটি ভিডিও বিবৃতির মাধ্যমে এই খবর নিশ্চিত করেছে। তবে, এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে গুরুতর সংশয় রয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস, যিনি জর্জ মারিও বার্গোগলিও নামে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন, বর্তমানে ৮৮ বছর বয়সী।

ভ্যাটিকানের অফিসিয়াল চ্যানেল বা বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁর মৃত্যুর কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই দাবি সম্ভবত মিথ্যা তথ্য বা ভুয়ো খবরের অংশ হতে পারে, যা পোপের সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে ছড়িয়েছে।

   

স্বাস্থ্য সংকটের প্রেক্ষাপট (pope francis)

পোপ ফ্রান্সিস (pope francis) সম্প্রতি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনি ৩৮ দিন রোমের জেমেলি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি দ্বিপাক্ষিক নিউমোনিয়া এবং শ্বাসযন্ত্রের জটিল সংক্রমণে ভুগছিলেন।

এই সময়ে তিনি চারটি শ্বাসকষ্টের সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছেন, যার মধ্যে একটি ঘটনায় তিনি প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত নার্স মাসিমিলিয়ানো স্ট্রাপেটির নির্দেশে চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যান, যা অবশেষে তাঁর প্রাণ বাঁচায়। ২৩ মার্চ, ২০২৫ তারিখে তিনি

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় ফিরে আসেন। তাঁর চিকিৎসকরা দুই মাসের বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন।

৬ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে পোপ ফ্রান্সিস (pope francis) হুইলচেয়ারে বসে জনসাধারণের সামনে উপস্থিত হন এবং ভক্তদের অভিবাদন জানান। তিনি নিয়মিত ক্যাটেকেসিস প্রকাশ করছেন এবং সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যেমন বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি হলেও, তিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন।

ISL সেমিফাইনালে বাগানের কাছে আটকে ‘মেন অফ স্টিল’ পাখির চোখ সুপার কাপ

মিথ্যা তথ্যের ইতিহাস

পোপ ফ্রান্সিসের (pope francis) মৃত্যু নিয়ে এর আগেও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন, সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ায় যে তিনি মারা গেছেন। একজন ইতালীয় টিকটকার, ওত্তাভো, এমনকি জেমেলি হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে অনুপ্রবেশ করে ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেন, পোপ সেখানে নেই, তাই তিনি মৃত।

Advertisements

ভ্যাটিকান এই দাবি খণ্ডন করে এবং পোপের স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করে। পোপ নিজেও হাসপাতাল থেকে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে ভক্তদের ধন্যবাদ জানান, যা এই গুজবকে ভুল প্রমাণ করে। ভ্যাটিকানের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা স্বচ্ছতার সঙ্গে তথ্য প্রকাশ করে এবং এই ধরনের মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকে।

সামাজিক মাধ্যমে দাবি

২১ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে একাধিক সামাজিক মাধ্যম পোস্টে দাবি করা হয়, ভ্যাটিকানের একটি ভিডিও বিবৃতিতে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল এই ঘোষণা করেছেন। তবে, ভ্যাটিকান নিউজ, ক্যাথলিক নিউজ এজেন্সি বা অন্য কোনো বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমে এই তথ্যের কোনো প্রমাণ নেই। 

ভ্যাটিকানের স্বচ্ছতা

পোপ ফ্রান্সিসের (pope francis) স্বাস্থ্য সংকটের সময় ভ্যাটিকান অভূতপূর্ব স্বচ্ছতা প্রদর্শন করেছে। তাঁর চিকিৎসকরা নিয়মিত বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, যেখানে তাঁর শ্বাসকষ্ট, রক্ত সঞ্চালন এবং কিডনি সমস্যার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এই স্বচ্ছতা ভ্যাটিকানের ঐতিহ্যবাহী গোপনীয়তার নীতি থেকে সরে এসে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে। পোপের মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলে ভ্যাটিকান অবশ্যই অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশ করত, যা এখনও ঘটেনি।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। তাঁর হাসপাতালে ভর্তির সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রার্থনা এবং শুভেচ্ছা বার্তা ভ্যাটিকানে পৌঁছেছে। তবে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মৃত্যুর গুজব অনেককে বিভ্রান্ত করেছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই ধরনের তথ্য যাচাই না করে বিশ্বাস না করা এবং ভ্যাটিকান নিউজ, রয়টার্স বা সিএনএনের মতো বিশ্বস্ত সূত্রের উপর নির্ভর করা উচিত।

পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরাধিকার

পোপ ফ্রান্সিস, যিনি ২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হন, ক্যাথলিক চার্চকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য পরিচিত। তিনি নারী ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উন্মুক্ত করেছেন এবং শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেমন কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে-কে কলেজ অফ কার্ডিনালসের ডিন হিসেবে পুনর্নিয়োগ করা। তাঁর উত্তরাধিকার রক্ষার জন্য তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছেন।

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দাবি সম্ভবত সত্য এবং বিভিন্ন সমাজ মাদ্ধমে তার মৃত্যুকে নিশ্চিত করেছেন।