পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) আবারও জ্বলছে প্রতিবাদের আগুনে। কয়েক সপ্তাহ আগেই যেখানে কর-ছাড় ও ভর্তুকির দাবিতে জনরোষ ছড়িয়েছিল, এবার রাস্তায় নেমেছে নতুন প্রজন্ম ‘জেন জেড’। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও ফি বৃদ্ধি নিয়ে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এখন পরিণত হয়েছে শেহবাজ শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে।
মুজাফফরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়তি ফি ও দুর্বল পরিকাঠামো নিয়ে শুরু হয় এই প্রতিবাদ। ছাত্ররা দাবি তুলেছিল উন্নত শিক্ষা-সুবিধা ও ফি পুনর্বিবেচনার। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোর বিপরীত মুখ নেয়, যখন এক অজ্ঞাত বন্দুকধারী বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায়। এক ছাত্র আহত হন। সেই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই রাস্তায় উত্তাল জনতা, টায়ার জ্বালানো, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, আর পাকিস্তান-বিরোধী স্লোগানে মুখর শহর।
ই-মার্কিং থেকে ক্ষোভের আগুন
বিক্ষোভের মূল ইস্যু ‘ই-মার্কিং’ বা ডিজিটাল মূল্যায়ন পদ্ধতি। গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ফলাফল ছাত্রদের হতাশ করেছে। অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, অনুপস্থিত থেকেও কেউ কেউ পাশ করেছেন, আবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়া হয়েছে। একাধিক শিক্ষা বোর্ড এর তদন্ত শুরু করলেও সরকারের তরফে এখনো কোনও পরিষ্কার ব্যাখ্যা মেলেনি।
তাদের আরও অভিযোগ, রিচেকিং ফি রাখা হয়েছে ১,৫০০ পাকিস্তানি টাকা প্রতি বিষয়পত্রে— অর্থাৎ সাতটি বিষয়ের পুনর্মূল্যায়নের জন্য দিতে হচ্ছে প্রায় ১০,৫০০ টাকা। গরিব পরিবারের ছাত্রদের পক্ষে যা কার্যত অসম্ভব।
শ্রেণিকক্ষ পেরিয়ে ক্ষোভ এখন সর্বব্যাপী PoK Student Protests Gen Z
এই প্রতিবাদ এখন শুধু শিক্ষার সীমায় আটকে নেই। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, গণপরিবহন— সর্বত্র ভাঙা পরিকাঠামো ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে তরুণ প্রজন্ম। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি’— যে সংগঠন গত মাসের রক্তাক্ত বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
তখনও পুলিশের গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল ১২ জনের। আন্দোলন থামাতে সরকার সাময়িকভাবে ছাড় দিলেও, মূল সমস্যাগুলি থেকে গিয়েছে অমীমাংসিত।
দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণ বিদ্রোহের ছায়া
এই তরুণ আন্দোলনের ছায়া যেন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়। কিছুদিন আগেই নেপালে জেন জেড তরুণদের প্রতিবাদে পতন ঘটে কেপি শর্মা ওলির সরকার। তার আগেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পিছনেও ছিল ছাত্র-যুবকদের নেতৃত্বাধীন তীব্র ক্ষোভ। শ্রীলঙ্কাতেও এমন জনরোষেই উচ্ছেদ হয়েছিল রাজাপক্ষ ভাইদের শাসন।
এবার সেই অগ্নিশিখা যেন পৌঁছে গেছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে— যেখানে তরুণ প্রজন্মের একের পর এক দাবি, প্রশ্নবিদ্ধ করছে ইসলামাবাদের শাসনযন্ত্রকেই।


