নয়াদিল্লি: পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (POK)-এ নির্বাচিত সরকারের ৩৮টি দাবি না মেটায় শুরু হয়েছে ব্যপক বিক্ষোভ৷ অন্তত ১২ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আরও তিনজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর মৃত্যুর খবর মিলেছে।
বৃহস্পতিবার এই বিক্ষোভ তৃতীয় দিনে প্রবেশ করেছে এবং তা দাদিয়াল, মুজাফফরাবাদ, রাওয়ালাকোট, নীলাম ভ্যালি ও কোটলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ও সেনা অভিযান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যস্ত থাকলেও, প্রতিবাদকারীরা রাস্তাঘাট অবরোধ এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিক্ষোভের মূল দাবি
আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর যৌথ আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (AAC)। তাদের প্রধান দাবি হল POK-তে কাশ্মীরি শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি আসন বাতিল করা। এছাড়া চাওয়া হচ্ছে করমুক্তি, আটা ও বিদ্যুতের উপর ভর্তুকি, এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের দ্রুত সম্পূর্ণতা।
প্রাণঘাতী সংঘর্ষ ও ক্ষয়ক্ষতি
মুজাফফরাবাদ: ৫ জন নিহত
ধীরকোট: ৫ জন নিহত
দাদিয়াল: ২ জন নিহত
আহতের সংখ্যা ২০০-এর বেশি, অনেকেই গুলিবিদ্ধ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় পাথর ছুঁড়ছেন, বড় বড় শিপিং কনটেইনার উল্টাচ্ছেন। বিভিন্ন শহরে স্লোগান উঠেছে— “শাসকরা সতর্ক থাকুন, আমরা আপনার ধ্বংস” এবং “কাশ্মীর আমাদের, আমরা এর ভাগ্য নির্ধারণ করব”। এ ধরনের সরাসরি সরকারি ও সেনা-বিরোধী স্লোগান POK নাগরিকদের পক্ষ থেকে যুগের পর যুগে এটাই প্রথম নজরকাড়া প্রতিবাদ।
পাকিস্তানি সরকারের পদক্ষেপ pok protests civilian killings
অবস্থা ক্রমশ উত্তপ্ত হওয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, সরকার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে প্রস্তুত এবং একটি মধ্যস্থতা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি লন্ডনে ছুটিতে থাকা অবস্থায় নাগরিকদের সঙ্গে সহনশীলতা ও ধৈর্য প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আবেদন
ন্যাশনাল ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির (UKPNP) মুখপাত্র নাসির আজিজ খান রাষ্ট্রসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে POK-তে মানবিক সংকট রোধে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন। জেনেভার UNHRC-তে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, POK-তে মানবাধিকার ও নিরাপত্তার পরিস্থিতি অতি সংকটাপন্ন।
এই ঘটনা পাকিস্তানের পূর্বসপ্তাহের খাইবার পাখতুনখোয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার অংশ, যেখানে ৩০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিল।