পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের (PoJK) অশান্তি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। টানা কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দশজন, গুরুতর জখম শতাধিক। প্রশাসন দমনমূলক কৌশল নিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ। এর মাঝেই পাকিস্তানকে সরাসরি ‘দস্যুরাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপল’স ন্যাশনাল পার্টি (UKPNP)-র নেতা জমিল মকসুদ।
জেনেভায় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পাকিস্তান ইতিহাস জুড়ে নিজেদের নাগরিকদের দমন করেছে। আজ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ স্পষ্ট বুঝে গিয়েছে—তাদের ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের সঙ্গে নয়। তাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা প্রাক্তন জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সঙ্গে পুনর্মিলন।”
দমননীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
মকসুদের অভিযোগ, পাকিস্তান জোর করে মানুষের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আর নীরব থাকতে প্রস্তুত নন। কেবল কাশ্মীর নয়—বেলুচিস্তান, সিন্ধ, খাইবার পাখতুনখাওয়া, গিলগিট-বালতিস্তান—সব জায়গাতেই একই চিত্র: রক্তপাত, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মৌলিক অধিকার হরণের অন্ধকার বাস্তব।
রক্তে ভেজা রাস্তায় বিদ্রোহ pojk protests pakistan rogue state
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, মুজফ্ফরাবাদের রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে গুলির খোল, ভাঙা কাঁচ, ইট-পাথর, আর রক্তের দাগ। সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এক সুরে দাবি তুলেছেন—রাজনৈতিক শ্রেণির ভোগবিলাস, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও বিলাসবহুল গাড়ির বিশেষ সুবিধা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
এক প্রতিবাদীর কথায়, “এখানকার রাজনীতিকরা গ্যাংস্টারের মতো আমাদের মাথার উপর রাজত্ব করছে। আমরা তাদের শাসন চাই না।”
ইন্টারনেট বন্ধ, সংবাদমাধ্যমে রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ
উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাকিস্তানি প্রশাসন ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা স্থগিত করেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে কড়া সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে—দৈনিক বিক্ষোভের চিত্র প্রচার করা যাবে না। অথচ সর্বোচ্চ সময়ে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ছ’হাজার ছাড়িয়েছে।
সরকারি হিসাবে, অন্তত ১৭০ জন পুলিশ এবং ৫০ জন বেসামরিক মানুষ আহত হয়েছেন। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি—শুধু সাধারণ নাগরিকদেরই জখমের সংখ্যা একশোরও বেশি।
প্রশ্নের মুখে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ
রক্তাক্ত বিক্ষোভ পাকিস্তানের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে আবারও প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ কি ইসলামাবাদের দমননীতির শিকার হয়েই চলবে, নাকি ইতিহাস নতুন মোড় নিয়ে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেবে—এ প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।