ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সোমবার (স্থানীয় সময়) ফ্রান্সে তাঁর তিন দিনের সফর শুরু করেছেন। প্যারিসে পৌঁছানোর পর ফরাসি মন্ত্রী সেবাস্তিয়ঁ লেকর্নুরের উপস্থিতিতে মোদীকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তবে, মোদীর সফরের এই প্রথম দিনটির বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্যারিসে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাঁকে দেওয়া উষ্ণ অভ্যর্থনা, যা ছিল শীতল আবহাওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী।
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর টুইটার একাউন্ট (এখন ‘X’ নামেও পরিচিত) এর মাধ্যমে ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, “প্যারিসে একটি স্মরণীয় অভ্যর্থনা! ঠান্ডা আবহাওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় সম্প্রদায় তাঁদের ভালোবাসা এবং উষ্ণতা প্রদর্শন করেছে। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ এবং তাঁদের অর্জনে গর্বিত!”
পিএম মোদী, ফ্রান্সে তাঁর সপ্তম সফরটি শুরু করেছেন এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর কারণ এর মধ্যে তিনি প্যারিসে বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গে বৈঠক করবেন, পাশাপাশি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সঙ্গে দুই দেশের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। এদিন মোদী, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসবেন, যেখানে তারা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন এবং ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ফ্রান্সে মোদীর সফরের উদ্দেশ্য
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) অ্যাকশন সামিট। এই সামিটে মোদী এবং ম্যাক্রন যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যত, এর প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিশেষভাবে, এ সময়ে উভয় দেশের মধ্যে প্রযুক্তি, ব্যবসা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
ফ্রান্সে মোদীর আগমন এবং ভারতীয় সম্প্রদায়ের উষ্ণ অভ্যর্থনা, প্রমাণ করে যে ফ্রান্সে বসবাসরত ভারতীয়রা তাঁদের দেশে নেতার প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শীতের তীব্রতা সত্ত্বেও, ভারতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা মোদীকে স্বাগত জানাতে একত্রিত হন, যা তাঁদের দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রীর বার্তা: ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি গর্ব
এদিন পিএম মোদী ভারতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, “ফ্রান্সে ভারতীয় সম্প্রদায়ের এই ভালোবাসা, সহানুভূতি ও উষ্ণতা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, বিদেশে থেকেও ভারতীয়রা তাঁদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা কখনোই হারায় না। আমি তাঁদের অর্জন এবং সাফল্যের প্রতি গর্বিত।”
মোদীর এই সফর ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কের জন্য একটি নতুন মাইলফলক হতে চলেছে। তিনি ফ্রান্সে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন এবং উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
প্যারিসে ভারতীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক ভূমিকা
ফ্রান্সে ভারতীয় সম্প্রদায়ের একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। বহু বছর ধরে, এখানে বসবাসরত ভারতীয়রা ফ্রান্সের সমাজে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন, যেমন শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ব্যবসা এবং রাজনীতি। প্যারিসে ভারতীয়দের একটি সুসংহত এবং সক্রিয় সম্প্রদায় রয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশেষ করে, মোদীর সফরের সময় প্যারিসের ভারতীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তাঁরা মোদীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা ব্যক্ত করতে চেয়েছিলেন। তাদের এই উষ্ণ অভ্যর্থনা ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে।
ফ্রান্সে মোদীর সফল সফরের সম্ভাবনা
মোদীর এই সফর ফ্রান্স এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং মোদীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কেবল দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি সাধন করবে না, বরং তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে, প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এই সফরের মধ্যে, মোদী এবং ম্যাক্রন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, মহাকাশ গবেষণা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। এছাড়া, ব্যবসায়িক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে।
ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভূমিকা
ফ্রান্সে ভারতীয় সম্প্রদায়ের রয়েছে এক বিশাল প্রভাব। তাঁরা এখানকার অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ব্যবসা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মোদী নিজেও বারবার উল্লেখ করেছেন যে, ভারতের বিদেশে থাকা নাগরিকরা দেশের গর্ব এবং তারা ভারতকে গর্বিত করে।
ফ্রান্সে বসবাসরত ভারতীয়রা সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অধিকারী। তাদের পেশাগত সাফল্যের পাশাপাশি, তারা সমাজে বিভিন্ন দানে এবং সংস্থায় অবদান রেখেছে, যা দেশটির সংস্কৃতির প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
এভাবে, প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নই নয়, ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার প্রতীক। মোদী এই সফরকে সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হলে, এটি ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে আরও দৃঢ় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে।