মোদী সরকারের নেতৃত্বে বিশ্ব অর্থনৈতিক চাপেও ভারতের রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যে ভারত যে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, মঙ্গলবার সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ (Semicon India 2025) সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তা স্পষ্ট করে তুললেন…

modi on india gdp growth

বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যে ভারত যে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, মঙ্গলবার সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ (Semicon India 2025) সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তা স্পষ্ট করে তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)।

দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সেমিকন্ডাক্টর সম্মেলনে মোদি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) শুল্ক নীতির প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত করে বলেন, “আজ যখন বিশ্ব অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যখন অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা (economic selfishness) অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে, সেই পরিস্থিতিতেও ভারত প্রত্যাশার তুলনায় অনেক ভালো করেছে।”

   

ভারতের প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপি (GDP) পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে গত শুক্রবার। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভারতের অর্থনীতি ৭.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত পাঁচ প্রান্তিকের মধ্যে সর্বাধিক। এর আগে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্ক নীতি কার্যকর হওয়ার পরেও ভারতের এই প্রবৃদ্ধি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একসময় ভারতকে নিয়ে যে বিশ্বে সন্দেহ ছিল, আজ সেই বিশ্বই ভারতের উপর আস্থা রাখছে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য বিশ্বের দেশগুলি ভারতের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।” সম্মেলনে মোদি দেশের প্রথম তৈরি সেমিকন্ডাক্টর চিপ গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তি শিল্পে আত্মনির্ভরতার দিকে আরও এক ধাপ এগোল ভারত।

Advertisements

উল্লেখ্য, গত আগস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। পরে রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার জন্য ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প প্রশাসন। মোট ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে আমেরিকায় ভারতীয় রপ্তানির উপর চাপ তৈরি হয়েছে। ভারত সরকার এই শুল্ককে “অন্যায়” বলে বর্ণনা করেছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ সম্মেলনের মাধ্যমে ভারতীয় সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স এবং চিপ উৎপাদন খাতে নতুন বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, “ভারত এখন স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কেন্দ্র। বিশ্বের যে কোনও বড় প্রযুক্তি সংস্থা যদি তাদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ এবং লাভজনক গন্তব্য খুঁজে থাকে, তবে ভারত তাদের প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।”

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার সময় ভারতীয় অর্থনীতির এই সাফল্য আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের প্রতি আস্থা আরও বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মেক ইন ইন্ডিয়া এবং প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) প্রকল্প দেশের শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়া থেকে সস্তা তেল আমদানি ও কৌশলগত বাণিজ্যনীতির কারণে বিশ্ববাজারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে ভারত।

মোদী সরকারের বার্তা স্পষ্ট—বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপে মাথা নত না করে দেশীয় উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার মাধ্যমে ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজের জায়গা শক্ত করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ ভারতীয় রপ্তানি খাতের জন্য কঠিন হলেও, অভ্যন্তরীণ বাজার ও বিদেশি বিনিয়োগের জোরে ভারত এগিয়ে চলেছে।