ভারত-চিন সম্পর্কে নতুন দিশা, সাই চি’র সঙ্গে বৈঠকে মোদী

তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং রবিবার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হলেন। বৈঠকে দুই…

ভারত-চিন সম্পর্কে নতুন দিশা, সাই চি’র সঙ্গে বৈঠকে মোদী

তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং রবিবার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হলেন। বৈঠকে দুই দেশই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের মধ্যে বিনিময় জোরদার করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (MEA) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে দুই নেতা কাজানে গত বছরের বৈঠকের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, ভারত ও চিন প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং উন্নয়নের অংশীদার। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, দুই দেশের মতপার্থক্য যেন কখনো বিবাদে রূপ না নেয়।

   

MEA-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, সীমান্তে শান্তি ছাড়া দুই দেশের সম্পর্ক টেকসইভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধিদের (SRs) কাজকে সমর্থন করেন এবং সীমান্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান।

বৈঠকে দুই নেতা জনগণ-স্তরে সম্পর্ক বৃদ্ধির গুরুত্বের কথাও বলেন। মোদী ও শি উভয়েই সম্মত হন যে, সরাসরি ফ্লাইট চালু, ভিসা সহজীকরণ এবং কৈলাস মানসরোবর যাত্রা পুনরারম্ভের মতো পদক্ষেপ সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়া পর্যটক ভিসা চালুর বিষয়েও আলোচনা হয়।

অর্থনৈতিক দিক থেকে দুই দেশই স্বীকার করেছে যে, ভারত ও চিনের অর্থনীতি বিশ্ব বাণিজ্যকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈঠকে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উপায় নিয়ে আলাপ হয়। দুই নেতা জোর দিয়ে বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং কৌশলগত ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা জরুরি।

Advertisements

MEA জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী উল্লেখ করেন যে, ভারত ও চিন উভয়েই কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে প্রাধান্য দেয়। তাই দুই দেশের সম্পর্ককে কখনো তৃতীয় দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত নয়।
বৈঠকে দু’দেশই সন্ত্রাসবাদ ও ন্যায্য বাণিজ্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। উভয় পক্ষের মতে, বহু-পাক্ষিক সংস্থাগুলিতে (multilateral platforms) ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থরক্ষা করা জরুরি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সাই চি’র সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক, এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উঠে আসে। মোদী তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি সাই চি’র সামনে তুলে ধরেন এবং তা বাস্তবায়নে সমর্থন চান। পাল্টা সাই চি জানান, চীনও একইভাবে দ্বিপাক্ষিক বিনিময় ও সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী চিনের সভাপতিত্বে তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনকে সমর্থন জানান। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রপতি শি-কে ২০২৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। শি জিনপিং ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চীন ভারতের ব্রিকস সভাপতিত্বে পূর্ণ সমর্থন দেবে।
ভারত-চিন সম্পর্ক বহু সময়ই জটিল হয়ে উঠেছে সীমান্ত সমস্যা, বাণিজ্য বৈষম্য ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে। তবে এবারের বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, উভয় দেশই নিজেদের মতপার্থক্য সত্ত্বেও সহযোগিতার পথ বেছে নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাষ্ট্রপতি শি দু’জনেই জোর দিয়ে বলেছেন, স্থিতিশীল ও সুসম্পর্কিত ভারত-চিন সম্পর্ক শুধু এশিয়ার জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বহুপাক্ষিকতার জন্য অপরিহার্য।

তিয়ানজিনের এই বৈঠক তাই শুধু কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং বাস্তব সহযোগিতার নতুন প্রতিশ্রুতি। সীমান্তে শান্তি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্যে ন্যায্যতা এবং বৈশ্বিক ইস্যুতে সমন্বয় – এই চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়েই ভারত-চিন সম্পর্ক আগামী দিনে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।