পেরুর দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় (Peru bus crash) অন্তত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ২৪ জন। বুধবার ভোরে আরেকিপা অঞ্চলের পান আমেরিকান সাউথ হাইওয়েতে যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর বাসটি প্রায় ২০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা AFP এবং স্থানীয় প্রশাসনের রিপোর্টে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে ভোরবেলা, যখন পাহাড়ি হাইওয়ে কুয়াশায় ঢাকা ছিল। রাস্তাটি পেরু থেকে চিলি সংযোগকারী প্রধান আন্তর্জাতিক সড়ক, যেখানে যানবাহনের চাপ থাকে অত্যন্ত বেশি। পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, তীক্ষ্ণ বাঁক, এবং সামনে স্পষ্টভাবে কিছু দেখতে না পাওয়ার কারণেই মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি Llamosas ট্রাভেল কোম্পানির এবং সেটি কারাভেলি প্রদেশের চালা শহর থেকে আরেকিপা শহরের দিকে যাচ্ছিল। বাসে মোট ৬০ জন যাত্রী উপস্থিত ছিলেন। বাঁক নেওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে বাসটির সজোরে ধাক্কা লাগে। সংঘর্ষের প্রচণ্ডতায় বাসটি রাস্তার সেফটি ব্যারিয়ার ভেঙে ৬৫০ ফুট (২০০ মিটারেরও বেশি) গভীর খাদের মধ্যে ছিটকে পড়ে।
বাস খাদের তলদেশে পৌঁছানোর আগেই অনেক যাত্রী ছিটকে পড়েন। কেউ কেউ চিৎকার করতে করতে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ালেও গভীর খাদ ও অন্ধকারের কারণে উদ্ধার দ্রুত শুরু করা যায়নি।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ, দমকল, স্বাস্থ্য দপ্তর এবং রেসকিউ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আহতদের দ্রুত আরেকিপার স্থানীয় ও জেলা হাসপাতালগুলিতে পাঠানো হয়। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে, এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।
আরেকিপা অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ওয়ালথার অপোর্তো (Walther Oporto) এক বিবৃতিতে জানান, এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেছে। আহত ২৪ জনের মধ্যে অনেকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় এলাকায় ঘন কুয়াশা ছিল এবং ওই অংশটি দুর্ঘটনাপ্রবণ জোন হিসেবে পরিচিত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভয়ংকর শব্দ শুনে তাঁরা ছুটে গিয়ে দেখেন বাসটি রেলিং ভেঙে খাদে পড়ে যাচ্ছে। অনেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন, কিন্তু অন্ধকার এবং গভীরতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পেরুর পরিবহণ মন্ত্রক ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বাস চালকের গতি, রাস্তার অবস্থা, ব্রেক ফেলিওর, চালকের সতর্কতা, এবং নিরাপত্তা নিয়ম মানা হয়েছিল কিনা সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকল আধিকারিকরা জানিয়েছে, খাদ অত্যন্ত গভীর এবং সরু হওয়ায় উদ্ধার কাজে সমস্যা হচ্ছে, যাত্রীদের অনেকেই আঘাতের কারণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন, আহতদের মধ্যে বেশিরভাগের মাথায় ও বুকে গুরুতর চোট রয়েছে।
পেরুতে পাহাড়ি রাস্তায় এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছরই দেশটির পার্বত্য রাস্তাগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংকীর্ণ রাস্তা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, পর্যাপ্ত রাস্তা আলো না থাকা, এবং ট্রাফিক আইন না মানাই প্রধান কারণ।
এই ঘটনায় গোটা পেরু শোকস্তব্ধ। নিহতদের পরিবারে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার। প্রশাসন মৃতদের দেহ শনাক্তকরণ ও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আহতদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হবে এবং পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তার ঘোষণাও শিগগির করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসকরা।


