পেন্টাগনের (Pentagon) সাম্প্রতিক বক্তব্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মধ্যে গুয়ামের দিকে পাঠানো মার্কিন বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো ছিল প্রতারণামূলক কৌশলের অংশ। এই বিমানগুলো গুয়ামের অ্যান্ডারসেন এয়ার ফোর্স বেসে পাঠানো হয়েছিল বলে প্রচার করা হলেও, এগুলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য ব্যবহৃত হয়নি।
পরিবর্তে, অন্য বি-২ বিমান মিসৌরির হোয়াইটম্যান এয়ার ফোর্স বেস থেকে সরাসরি পূর্ব দিকে ইরানের দিকে উড়ে যায়, যারা ফোর্ডো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানে হামলা চালিয়েছে। এই প্রতারণামূলক কৌশল ইরানের প্রস্তুতিকে বিভ্রান্ত করতে সফল হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতারণার কৌশল (Pentagon)
মার্কিন (Pentagon) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুয়ামের দিকে যাওয়া বি-২ বিমানগুলোর গতিবিধি উন্মুক্তভাবে ট্র্যাক করা হয়েছিল, যা ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য করা হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল যোগাযোগে দেখা গেছে, ছয়টি বি-২ বিমান হোয়াইটম্যান এয়ার ফোর্স বেস থেকে গুয়ামের দিকে উড়ে যায়।
এই বিমানগুলোর সঙ্গে ছিল আটটি কেসি-১৩৫ স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কার এবং চারটি কেসি-৪৬ পেগাসাস রিফুয়েলিং বিমান। তবে, এই গতিবিধি ছিল একটি প্রতারণা। আসল হামলাকারী বি-২ বিমানগুলো গোপনে পূর্ব দিকে ইরানের দিকে উড়ে যায়, যা কোনো ট্র্যাকিংয়ে ধরা পড়েনি।
পেন্টাগনের (Pentagon) মতে, তিনটি বি-২ বিমান ছয়টি ৩০,০০০ পাউন্ডের জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) বোমা ব্যবহার করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এই বোমাগুলো ফোর্ডোর মতো গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। ফক্স নিউজের সাংবাদিক জেনিফার গ্রিফিন জানিয়েছেন, গুয়ামগামী বিমানগুলো সবার দৃষ্টি পশ্চিম দিকে আকর্ষণ করেছিল, যখন আসল হামলা পূর্ব থেকে হয়েছে। এই কৌশলের ফলে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হয় এবং হামলার কোনো পূর্বাভাস তারা পায়নি।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপট
ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে চলমান সংঘাতের মধ্যে এই হামলা সংঘটিত হয়। ইসরায়েল ১৩ জুন থেকে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। ইরানও পাল্টা হামলা চালিয়ে তেল আবিবসহ ১০টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
মার্কিন (Pentagon) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছিলেন তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার জন্য, কিন্তু এই হামলার মাধ্যমে তিনি সরাসরি সংঘাতে যোগ দিয়েছেন। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে দাবি করেছেন যে ফোর্ডো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” করা হয়েছে।
মার্কিন কৌশল ও প্রতিক্রিয়া
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হামলায় প্রতারণামূলক কৌশল এবং উন্নত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বি-২ বিমানগুলোর গুয়ামে স্থানান্তর সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে ট্র্যাক করা হয়েছিল, যা ইচ্ছাকৃতভাবে ইরান ও অন্যান্য পক্ষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য করা হয়। এক্স-এর পোস্ট অনুযায়ী, এই প্রতারণা এতটাই সফল ছিল যে সিএনএন-এর মতো সংবাদমাধ্যমও গুয়ামগামী বিমানগুলোকে হামলার অংশ মনে করেছিল।
ট্রাম্প জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, “ইসরায়েলের সঙ্গে আমরা একটি অভূতপূর্ব দল হিসেবে কাজ করেছি। এই হামলা বিশ্বে বহু দশক ধরে দেখা যায়নি।” তিনি ইরানকে পাল্টা হামলা না করার জন্য সতর্ক করে বলেন, পরবর্তী হামলা আরও বড় হবে। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা হুমকির মুখে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবে না। এদিকে, হুথি বিদ্রোহীরা মার্কিন জাহাজে হামলার হুমকি দিয়েছে।
Honor Magic V5 বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ফোল্ডেবল ফোন! সামনে এল ছবি ও স্পেসিফিকেশন
ফোর্ডোর গুরুত্ব
ইরানের ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনা একটি পাহাড়ের নিচে প্রায় আধা মাইল গভীরে অবস্থিত, যা সাধারণ বোমা দিয়ে ধ্বংস করা কঠিন। বি-২ বিমানই একমাত্র এমওপি বোমা বহন করতে সক্ষম, যা এই ধরনের স্থাপনা ধ্বংসে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোর্ডো ধ্বংস করতে একাধিক নির্ভুল হামলার প্রয়োজন, এবং মার্কিন বাহিনী এই কাজে সফল হয়েছে।
পেন্টাগনের (Pentagon) এই প্রতারণামূলক কৌশল মার্কিন সামরিক ক্ষমতা এবং কৌশলগত পরিকল্পনার শক্তি প্রদর্শন করেছে। গুয়ামগামী বি-২ বিমানগুলোর মাধ্যমে ইরানের দৃষ্টি বিভ্রান্ত করা এবং গোপনে হামলা চালানো একটি মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং হুথিদের হুমকির কারণে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং শান্তির আহ্বান এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।