যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনে চড়া দামে বিকোচ্ছে ভারতীয় Parle-G

যুদ্ধের ক্ষতবিক্ষত প্যালেস্টাইন এখন মানবিক সংকটে জর্জরিত। সেখানে খাবার, জল, ওষুধের তীব্র অভাব। এরই মধ্যে সামনে এল এক হৃদয়বিদারক অথচ চমকপ্রদ তথ্য—ভারতের পাঠানো সাহায্যের খাদ্যসামগ্রী,…

Parle-G, biscuit, Gaza, Gaza food crisis

যুদ্ধের ক্ষতবিক্ষত প্যালেস্টাইন এখন মানবিক সংকটে জর্জরিত। সেখানে খাবার, জল, ওষুধের তীব্র অভাব। এরই মধ্যে সামনে এল এক হৃদয়বিদারক অথচ চমকপ্রদ তথ্য—ভারতের পাঠানো সাহায্যের খাদ্যসামগ্রী, বিশেষ করে Parle-G বিস্কুট, গোপনে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

গাজার এক বাসিন্দা মহম্মদ জওয়ান সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, “অনেকদিন পর অবশেষে রাফিফের প্রিয় বিস্কুটটা জোগাড় করতে পেরেছি। যদিও দাম আগের €1.5 থেকে বেড়ে এখন €24-এর বেশি, তাও ওকে না বলে পারিনি।”

   

এই একটি পোস্টেই উঠে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার নিষ্ঠুর বাস্তবতা—সাহায্যের নাম করে আসা খাবারই এখন ব্যবসার পণ্য, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

সাহায্য থেকে ব্যবসা
ভারত সরকার এবং অন্যান্য দেশের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী প্যালেস্টাইনে বহু মাস ধরেই পৌঁছচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর অনেকটাই শেষ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে কিছু প্রভাবশালী স্থানীয় বিক্রেতার হাতে। ফলে যে বিস্কুট সাধারণত মাত্র ₹৫ থেকে ₹১০ টাকায় ভারতে বিক্রি হয়, সেটাই গাজায় পৌঁছে ২,৫০০-২,৭০০ টাকারও বেশি দামে বিকোচ্ছে।

“Parle-G এখন রেশনের থেকেও দামী”
গাজার পরিস্থিতি এমনই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অনেকেই বলছেন, “Parle-G এখন আমাদের কাছে রেশনের থেকেও বেশি মূল্যবান। এটা শুধু খাবার নয়, মনোবল জোগায়।”

রাফিফ নামের ছোট্ট মেয়েটির মুখে হাসি ফোটাতে জওয়ান নিজের সঞ্চয়ের শেষ টাকা খরচ করতে পিছপা হননি। তার এই ত্যাগ এবং বাস্তবতা সোশ্যাল মিডিয়ায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিশ্বজুড়ে।

প্রশ্নের মুখে ত্রাণ বিতরণ
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠেছে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—ত্রাণ কীভাবে বিতরণ হচ্ছে? ভারত এবং অন্যান্য দেশ যে সদিচ্ছা নিয়ে সাহায্য পাঠাচ্ছে, তা কি সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছচ্ছে?

Advertisements

মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে, বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে এ ধরনের ‘ত্রাণের বাণিজ্য’ নতুন কিছু নয়, তবে গাজার মতো সংকটাপন্ন জায়গায় এই ধরনের অসাধু চক্র আরও উদ্বেগজনক।

বিস্ময়ে ভারতীয় নেটিজেনরা
Parle-G বিস্কুটের সঙ্গে ভারতের আবেগ জড়িয়ে। বহু ভারতীয় নেটিজেন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, “যে বিস্কুট আমরা ছেলেবেলায় দু’টাকার প্যাকেটেও কিনতাম, সেটাই গাজায় আজ €24! এটা কতটা অবিশ্বাস্য, আবার কতটা হৃদয়বিদারক।” অনেকে সরাসরি ভারত সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন ত্রাণ সামগ্রী আরও স্বচ্ছভাবে ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বিতরণ হয়।

সমাধানের পথ কোথায়?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র সাহায্য পাঠালেই হবে না, সেই সাহায্য সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে কি না, তা নিয়েও আন্তর্জাতিক নজরদারি থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরপেক্ষ NGO এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ত্রাণ বণ্টন করলে এই ধরনের কালোবাজারি অনেকটাই রোখা সম্ভব।

Parle-G বিস্কুট প্যালেস্টাইনে এখন শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, বরং যুদ্ধের বাস্তবতায় এক আবেগ, এক প্রতীক। এটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ত্রাণ শুধু পাঠালেই দায়িত্ব শেষ হয় না, বরং সেটি পৌঁছচ্ছে কি না, তাও নিশ্চিত করতে হবে। না হলে আগামী দিনেও রাফিফদের মুখে হাসি ফোটাতে বাবাদের দিতে হবে অপ্রয়োজনীয় ত্যাগ।