পাকিস্তানের সিন্ধ প্রাদেশিক পরিষদে ‘বিহারি’ (Bihari) শব্দ নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সৈয়দ ইজাজ উল হক প্রকাশ্যে এই শব্দকে অপমানজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিহারি’ শব্দটি শুধু তাঁকে নয়, গোটা সম্প্রদায়কেই অপমান করছে। এই আলোচনা এবং সৈয়দ ইজাজের বক্তব্যের ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি বলছেন এই শব্দটি ভুলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যে অবদান বিহারি সম্প্রদায় পাকিস্তানের সৃষ্টিতে রেখেছে, তা অসম্মান করা হচ্ছে।
‘বিহারিদের অবদান অস্বীকার করা অসম্মানজনক’
বক্তৃতায় সৈয়দ ইজাজ উল হক জোর দিয়ে বলেন, ‘‘বিহারিদের অবদানকে সম্মান জানানোর বদলে তাঁদের নিয়ে বিদ্রূপ করা হচ্ছে। এটি তাঁদের আত্মত্যাগকে অপমান করার সমান।’’
তিনি আরও বলেন, দেশভাগের পর যারা ভারত থেকে পাকিস্তানে এসেছিলেন, তাঁদের ‘বিহারি’ বা ‘মুহাজির’ বলা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ‘বিহারি’ শব্দটি নেতিবাচক তাৎপর্য পেতে শুরু করে। হক জানান, বিহারি সম্প্রদায়কে নিয়ে বিদ্রূপ করা তাঁদের পাকিস্তান সৃষ্টির অবদানের প্রতি একটি বড় ধরনের অসম্মান।
‘বিহারিরাই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল’
বক্তৃতার সময় সৈয়দ ইজাজ বলেন, ‘‘বিহারিরা সেই মানুষ, যাঁরা পাকিস্তান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁরা স্লোগান তুলেছিলেন— ‘হিন্দুস্তান ভাগ হবে, পাকিস্তান তৈরি হবে’। পাকিস্তানের অস্তিত্ব আজ তাঁদের কারণেই।’’
পরিচয়ের সংকটে ভুগছেন বিহারি সম্প্রদায়
দেশভাগের সময় বহু বিহারি এবং উত্তর প্রদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী পাকিস্তানে চলে আসে। কিন্তু পাকিস্তানে আসার পর থেকেই তাঁদের ‘মাইগ্রেন্ট’ বা ‘মুহাজির’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে তাঁদের পরিচয়ের সংকট তৈরি হয়। এই সংকট আজও তাঁদের উত্তরসূরিদের মধ্যে রয়ে গেছে, বিশেষত উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের পাঠান (খান) সম্প্রদায়ের মধ্যে।
Yeh voh Bihari musalman hai jiske Maa Baap ne 1947 mei Pakistan ke liye vote kiya tha aur Pakistan jaane ke liye train me bhi baithe the.
Prashn yeh hai ki baaki ke jo musalman the jinhone Pakistan ke liye vote kiya tha vo Pakistan kyon nahi gae??? pic.twitter.com/TjvVAjGQuF
— Incognito (@Incognito_qfs) December 18, 2024
পাকিস্তানে বিহারি সম্প্রদায়ের অবদান
বিহারি সম্প্রদায় পাকিস্তানের মুহাজির জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ। দেশভাগের সময় তাঁদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসে। তাঁদের অনেকেই সিন্ধু প্রদেশ এবং করাচিতে স্থায়ী হন। তবু, আজ পর্যন্ত তাঁদের আত্মত্যাগ এবং অবদানকে প্রায়শই অবমূল্যায়ন করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া
এই বিতর্ক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ সৈয়দ ইজাজ উল হকের বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতিগত পরিচয়ের বিষয়টি নিয়ে।
‘সমাজে বিভেদ দূর করতে হবে’
বক্তৃতার শেষে সৈয়দ ইজাজ উল হক বলেন, ‘‘জাতিগত পরিচয় নিয়ে এই বিভেদ দূর করতে হবে। পাকিস্তানের সৃষ্টিতে যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের সম্মান জানানো উচিত। বিভাজনের রাজনীতি দেশের অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’’