কাবুল: আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব খোস্ত প্রদেশে ভয়াবহ বোমাবর্ষণে মৃত্যু হল কমপক্ষে নয় শিশু এবং এক মহিলার। মধ্যরাতে সংঘটিত এই হামলার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীকে দায়ী করেছে আফগান প্রশাসন। মঙ্গলবার তালিবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ X–এ এক পোস্টে দাবি করেন, খোস্তের গুরবুজ জেলায় স্থানীয় বাসিন্দা ওয়ালিয়াত খানের বাড়িতে বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করে পাকিস্তানি বাহিনী।
হামলায় পাঁচ ছেলে ও চার মেয়েসহ মোট নয় শিশু এবং একজন মহিলা নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো বাড়িটি। একই সঙ্গে এই হামলা দু’দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই টলোমলো যুদ্ধবিরতির ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে।
মুজাহিদের অভিযোগ, এটাই একমাত্র আক্রমণ নয়। তিনি জানান, খোস্তের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব কুনার ও পূর্ব পাকতিকা প্রদেশেও বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে অন্তত চারজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। এদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই অভিযোগের বিষয়ে এখনো কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কূটনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে গত বহু মাস ধরে বারংবার সংঘাত, পাল্টা হামলা, এবং জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে উত্তেজনা অব্যাহত। দুটি দেশই পরস্পরকে সীমান্ত–পারের সন্ত্রাসবাদকে প্রশয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই এই নতুন হামলা যুদ্ধবিরতির ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তালিবান মুখপাত্রের দাবি, আফগানিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন এবং সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। তাঁর বক্তব্য, “ইসলামি আমিরাত এই হামলার তীব্র নিন্দা করছে। জনগণ, ভূমি ও আকাশসীমা রক্ষার অধিকার আমাদের রয়েছে। সময়মতো উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।” তবে ঠিক কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানানো হতে পারে—তা এখনও পরিষ্কার নয়। মুজাহিদের এই মন্তব্যকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সম্ভাব্য পাল্টা পদক্ষেপের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন।
হামলার সময় থাকা পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও জানা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রের বক্তব্য, নিহত শিশুদের বয়স ছিল ২ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। প্রতিবেশীরা জানান, রাতে আচমকা বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে, এবং মুহূর্তের মধ্যেই পুরো বাড়িটি আগুনে পুড়ে যায়। উদ্ধারকারী দল এবং গ্রামবাসীরা একসঙ্গে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে দেহগুলি উদ্ধার করেন।
এই হামলা ঘটে যাওয়ার মাত্র একদিন আগে পাকিস্তানের পেশোয়ারে ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারি সদর দপ্তরে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে বহু সেনা হতাহত হন। সেই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে তালিবানপন্থী জঙ্গি সংগঠনের ভাঙন গোষ্ঠী জামাত–উল–আহরার। সেই ঘটনার পরেই আফগানিস্তানে পাকিস্তানি বিমান হামলা সংঘটিত হওয়ায় দুই ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে কি না—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি যেভাবে ক্রমশ বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। বিশেষত শিশুদের মৃত্যু আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। সীমান্ত উত্তেজনা চলতে থাকলে আফগানিস্তান–পাকিস্তান অঞ্চলে মানবিক সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করছে নজরদারি সংস্থাগুলি।
