পারমাণবিক ছাতায় সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে পাকিস্তান: খাজা আসিফের মন্তব্যে তোলপাড়

কলকাতা: সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত এক ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের এক মন্তব্যে এই…

Pakistan Saudi defense pact

কলকাতা: সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত এক ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের এক মন্তব্যে এই চুক্তির তাৎপর্য বহুগুণে বেড়েছে, কারণ তিনি প্রথমবারের মতো খোলাখুলিভাবে বলেছেন যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা প্রয়োজনে সৌদি আরবের সুরক্ষায় ব্যবহৃত হতে পারে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক নিরাপত্তার সমীকরণকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চুক্তির মূল সুর

গত বুধবার স্বাক্ষরিত এই ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’তে বলা হয়েছে, যদি কোনো তৃতীয় পক্ষ এই দুই দেশের কোনো একটির ওপর আক্রমণ করে, তবে তা উভয় দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে এবং যৌথভাবে তার মোকাবিলা করা হবে। জিও টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, “আমাদের পারমাণবিক সক্ষমতা অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা কিছু আমাদের আছে, আমাদের সক্ষমতা, সবই এই চুক্তির অধীনে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধ হবে।” তিনি আরও জানান, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের জন্যও সম্প্রসারিত হতে পারে।

   

এই চুক্তিকে ইসরায়েলের প্রতি একটি বার্তা হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক, যাদের বিশ্বাস যে ইসরায়েলই মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র।

Advertisements

ভারতের প্রতিক্রিয়া Pakistan Saudi defense pact

এই চুক্তিতে সরাসরি ভারতের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উঠে এসেছে। দীর্ঘদিনের সামরিক মিত্রতা থাকলেও, এই চুক্তির ফলে ভারতের নিরাপত্তা নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, নয়াদিল্লি আশা করে যে সৌদি আরব তাদের ‘পারস্পরিক স্বার্থ এবং সংবেদনশীলতা’কে মাথায় রাখবে। তিনি আরও জানান, ভারত এই চুক্তির ফলে জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

বিশেষজ্ঞদের মত

প্রখ্যাত ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়ান ব্রেমার ইন্ডিয়া টুডে টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভারতের জন্য এটি একটি নতুন বাস্তবতা।” তিনি মনে করেন, এই চুক্তি কেবল পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থানকেই শক্তিশালী করবে না, বরং ভারতের নিরাপত্তা হিসেবনিকেশও বদলে দেবে। দীর্ঘকাল ধরেই ধারণা করা হয় যে সৌদি আরব পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে। এই চুক্তি সেই অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ককেই একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রেমার আরও বলেন, ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশের সামরিক আগ্রাসন নিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সুইডেনের ‘বুলেটিন অফ অ্যাটমিক সাইন্টিস্টস’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যা ভারতের ১৭২টি ওয়ারহেডের প্রায় সমান।