ইসলামাবাদ: বহু ঋণে জর্জরিত পাকিস্তান এবার হাত বাড়িয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে। দেশটির মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা বিরল খনিজ ও ক্রিটিক্যাল মিনারেল রপ্তানির নতুন দৌড়ে যুক্ত হয়েছে ইসলামাবাদ—এবং তার প্রথম গন্তব্য আমেরিকা। গত মাসে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে বিরল খনিজের নমুনা চালান, যা ঘিরে এখন রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে পাকিস্তানে।
আমেরিকায় যাচ্ছে খনিজ
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকান সংস্থা US Strategic Metals (USSM)-এর সঙ্গে পাকিস্তানের সেনা প্রকৌশল দফতর Frontier Works Organisation (FWO) গত সেপ্টেম্বর মাসে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে পাকিস্তানে খনিজ প্রক্রিয়াকরণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রথম চালানে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট এবং নীওডিমিয়াম ও প্রাসোডিমিয়ামের মতো বিরল মাটির উপাদান। এ চালানকে “দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক” বলে উল্লেখ করেছে USSM। তাদের বক্তব্য, পাকিস্তানের ভেতরেই অনুসন্ধান থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ‘ভ্যালু চেইন’-এর কাঠামো গড়ে তুলতে এই চুক্তি সহায়ক হবে।
বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব Pakistan Rare Earth Minerals Export
তবে এই ‘উন্নয়ন’কে ঘিরেই দেশজুড়ে উঠেছে প্রশ্নের ঝড়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (PTI) অভিযোগ তুলেছে, সরকারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ‘গোপন চুক্তি’ দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। দলের তথ্য সচিব শেখ ওয়াক্কাস আক্রমের দাবি, “জনগণ ও সংসদকে অন্ধকারে রেখে কোনও বিদেশি শক্তির সঙ্গে এমন চুক্তি করা রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী।”
PTI আরও দাবি করেছে, এই খনিজ চুক্তির পাশাপাশি পাকিস্তান সরকার বালুচিস্তানের পাসনি বন্দর আমেরিকাকে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে—যা অবস্থানগতভাবে ভারতের চাবাহার ও চিনের গওয়াদর বন্দর দুটির মাঝামাঝি। এ অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই পাকিস্তানি রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘উপনিবেশ-স্মৃতি’ ঘেঁষা তুলনা। আক্রম বলেন, “১৬১৫ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ব্রিটিশদের সুরাট বন্দর ব্যবহারের অধিকার দিয়েছিলেন। তার পরিণতি আমরা ইতিহাসে দেখেছি।”
ইসলামাবাদে বিতর্ক
এদিকে হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনির–এর সঙ্গে বিরল খনিজের একটি বাক্স পর্যালোচনা করছেন—পাশেই হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ওই ছবি ঘিরেও তুমুল আলোচনার জন্ম হয়েছে ইসলামাবাদে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনাময় ভাণ্ডার হলেও, অতীতে বহু বিদেশি সংস্থা প্রতিশ্রুত খনিজ মজুত না পেয়ে দেশ ছেড়েছে। এবারও আশঙ্কা, রাজনৈতিক চাপ ও স্বচ্ছতার অভাবে ইতিহাস যেন নিজেকে পুনরাবৃত্তি না করে।
পাকিস্তানের অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থায়, তখন এই খনিজচুক্তি ইসলামাবাদের জন্য একদিকে সম্ভাবনা, অন্যদিকে গভীর নির্ভরতার ফাঁদ—যার পরিণতি সময়ই বলবে।