Pakistan jihadism concerns: পাকিস্তান ধর্মের “ব্যাপক অপব্যবহার” করে জিহাদবাদের প্রজনন ঘটাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সামরিক বিমানচালনা বিশ্লেষক এবং ইতিহাসবিদ টম কুপার। তিনি জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময় কুপার বলেন, ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়া থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ফিলিপাইন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান ধর্মের ব্যাপক অপব্যবহার করছে, বিশেষ করে জিহাদবাদের প্রজনন ঘটাচ্ছে, এটির অর্থায়ন, সংগঠন এবং নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া নাইজেরিয়া থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত ইতিহাস জুড়ে চলছে। এই বিষয়ে কোনো পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না।”
পাকিস্তানে সামরিক একনায়কতন্ত্রের ছায়া
টম কুপার আরও বলেন, পাকিস্তান সামরিক একনায়কতন্ত্রের দ্বারা পীড়িত। তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক কখনোই সুস্থ ছিল না। দেশটির ইতিহাসে একাধিকবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে এটি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। দেশটি বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছে এবং এর ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় সামরিক একনায়কতন্ত্রের অধীনে ছিল। এই সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর নিজস্ব উদ্দেশ্য রয়েছে।”
ভারতের গোয়েন্দা নজরদারি এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা
কুপার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দক্ষতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পাকিস্তানের পারমাণবিক ঘাঁটি এবং এর কার্যক্রমের উপর নিখুঁতভাবে নজরদারি করছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং আগ্রহের বিষয়। এটি স্পষ্ট করে যে ভারত তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মাধ্যমে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলির কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতের কাছে সেখানে কী ঘটছে তার একটি স্পষ্ট চিত্র রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রায় দুই দশক আগেই উত্থাপিত হওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, “এটি এমন একটি স্পষ্ট চিত্র যে, যুদ্ধের শেষের দিকে ভারত পাকিস্তানের একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনার দুটি প্রবেশপথে আঘাত করেছিল, যেটি পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের স্থান বলে সন্দেহ করা হয়। এখন যখন তিনি বলছেন যে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র পরিচালনার সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ, তখন এটি নতুন কিছু নয়। আমরা এই ধরনের উদ্বেগ শুনেছি, যা পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রায় ২০ বছর আগে বা তারও বেশি সময় আগে উত্থাপিত হওয়া উচিত ছিল।”
ভারতের সতর্কতা এবং আধিপত্য
টম কুপার এএনআই-কে বলেন, ভারত পাকিস্তানের কার্যক্রমের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। তিনি বলেন, “এটি একটি নিশ্চিতকরণ যে এই বিষয়ে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে, এটিও নিশ্চিত করে যে ভারত পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে যা ঘটছে তা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। এটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আধিপত্য বা অপারেশনাল স্বাধীনতারও নিশ্চিতকরণ। এর অর্থ হলো, ভারত সম্ভবত কক্ষপথে উপগ্রহ রেখেছে, সম্ভবত দীর্ঘ-পরিসরের ড্রোন রয়েছে যা পাকিস্তানের নির্দিষ্ট স্থাপনাগুলির উপর নজর রাখছে এবং পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না।”
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং জিহাদবাদের প্রভাব
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের প্রসার বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুপারের মতে, পাকিস্তান শুধু নিজের দেশের মধ্যেই জিহাদবাদের প্রজনন ঘটাচ্ছে না, বরং এটি আন্তর্জাতিকভাবেও এর অর্থায়ন এবং সংগঠন করছে। এই প্রক্রিয়া আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এটি শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণেই প্রভাব ফেলে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুপারের মতে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী নিজস্ব স্বার্থ এবং উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়, যা দেশের বেসামরিক সরকারের সঙ্গে সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতের কৌশলগত সুবিধা
ভারতের গোয়েন্দা এবং সামরিক সক্ষমতা পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। কুপারের মতে, ভারতের কাছে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলির উপর নজর রাখার জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং কৌশল রয়েছে। এটি ভারতের সামরিক এবং গোয়েন্দা আধিপত্যের প্রমাণ। তিনি বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, ভারত এই বিষয়ে পূর্ণ সতর্ক এবং প্রস্তুত।
টম কুপারের বিশ্লেষণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক নীতির জটিলতা এবং এর প্রভাব তুলে ধরে। ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ, সামরিক একনায়কতন্ত্র এবং পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ পাকিস্তানকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে তুলেছে। অন্যদিকে, ভারতের সতর্কতা এবং গোয়েন্দা সক্ষমতা এই অঞ্চলে তার কৌশলগত সুবিধা নিশ্চিত করছে। পাকিস্তানের এই সমস্যাগুলির সমাধান না হলে, এটি কেবল দেশের জন্যই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে থাকবে।