সম্প্রতি তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সেন্ট্রাল কমিশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লিয়ারেন্স অ্যাফেয়ার্স তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে পাকিস্তান সরকার(Pakistan government) আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করার ভূমিকায় উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি, সন্ত্রাসবাদে সহায়তার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
২২ জানুয়ারি তালেবানের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদের বার্ষিক বৈঠকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের মাদক পাচার ও সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করার মাধ্যমে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হচ্ছে।
সেন্ট্রাল কমিশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লিয়ারেন্স অ্যাফেয়ার্স তালেবানের নিরাপত্তা কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা পরিচালনা, গোয়েন্দা বিভাগ, এবং সন্ত্রাস দমন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদক প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ যা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে পাকিস্তান সহ প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আফগানিস্তানে পাচার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর মধ্যে বেলুচিস্তানের আরানাই, লোরালাই এবং গুলিস্তান এলাকায় ব্যাপক আফিম চাষের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিদেবনটিতে।
এছাড়াও, এসব এলাকায় আফগান শরণার্থীদের মাদক প্রক্রিয়াকরণের কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় অবৈধ মাদক বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব কর্মকাণ্ড মূলত পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হলেও আফগানিস্তানের ওপর দোষ চাপিয়ে দেশটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে।
তালেবান সরকার আরও দাবি করেছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং তাদেরকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিচ্ছে। এমনকি, বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার মতো অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবির, এবং নিয়োগ কার্যক্রম চালানোর বিষয়ও উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তান এই গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের দেশে আশ্রয় দিয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। করাচি ও ইসলামাবাদ বিমানবন্দর হয়ে এই সন্ত্রাসীদের পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে এবং তারা ভবিষ্যতে আফগানিস্তান ও অন্যান্য অঞ্চলে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তালেবান জানিয়েছে, গত বছর তারা অনেক হামলাকেই ব্যর্থ করে দিয়েছে তাদের। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহায়তায় সন্ত্রাসবাদের মতো কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় তারা গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন। এই হামলাগুলির উদ্দেশ্য হলো বিদেশি বিনিয়োগকে রুখে দেওয়া এবং আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত করা। এই হামলাগুলির অধিকাংশ হামলাকারী পাকিস্তানি নাগরিক বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে আফগানিস্তান সরকার বিশেষ করে ডুরান্ড লাইন বরাবর সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সীমান্তে টাওয়ার নজরদারি, এবং অন্যান্য সুরক্ষা কাঠামো নির্মাণে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু এই উদ্যোগকে ভালো ভাবে নেয়নি পাকিস্তান সরকার। ফলে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে, কারণ তারা সীমান্ত বেড়া দিতে চায় না।