HomeWorldযুদ্ধের পর শিক্ষা! একীভূত কমান্ডে আরও ক্ষমতা মুনিরের?

যুদ্ধের পর শিক্ষা! একীভূত কমান্ডে আরও ক্ষমতা মুনিরের?

- Advertisement -

ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র সংঘর্ষের পর সেনা কাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তনের পথে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ এবার গঠন করতে চলেছে একক সামরিক নেতৃত্বের ব্যবস্থা — নতুন পদ ‘কমান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস (CDF)’। নামটি আপাতদৃষ্টিতে প্রশাসনিক মনে হলেও, রাজনৈতিক মহল বলছে—এই পদ আসলে সেনা-নির্ভর পাকিস্তানের ক্ষমতার ভারসাম্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

‘দ্য নিউজ’ ও ‘জিও নিউজ’-এর তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে সংশোধন আনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই অনুচ্ছেদে বলা আছে—“সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন প্রেসিডেন্ট, এবং সরকারের হাতে থাকবে বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ।” কিন্তু প্রস্তাবিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল কার্যকর হলে, সেই সাংবিধানিক নীতিই পাল্টে যাবে।

   

বেসামরিক শাসনের উপরে সেনার ছায়া আরও গাঢ়?

প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, নতুন পদ ‘কমান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস’-এর অধীনে আসবে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একীভূত কমান্ড। অর্থাৎ কার্যত তিন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীভূত হবে একজন সর্বাধিনায়কের হাতে, যিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের অধীন নন। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে বেসামরিক সরকারের সিদ্ধান্তগ্রহণ ক্ষমতা আরও সীমিত হয়ে পড়বে এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামোয় সেনাবাহিনীর প্রভাব আরও সাংবিধানিক রূপ পাবে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাওয়াজা আসিফও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “আধুনিক যুদ্ধের প্রকৃতি এবং প্রতিরক্ষা প্রয়োজনীয়তা বদলে গেছে। তাই আইনি কাঠামোতেও পরিবর্তন আসা প্রয়োজন।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই মন্তব্য নিছক প্রশাসনিক নয়, বরং এটি পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের ক্ষমতার বাস্তবতাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে।

আসিম মুনিরের উত্থানের প্রস্তুতি? Pakistan Commander of Defence Forces

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ২৮ নভেম্বর অবসর নিতে চলেছেন। ইসলামাবাদে রাজনৈতিক চর্চা, নতুন এই পদটি আসলে তাঁর জন্যই তৈরি হচ্ছে। যদি সংশোধনী পাস হয়, তবে আসিম মুনিরই হতে পারেন পাকিস্তানের প্রথম কমান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস, অর্থাৎ তিন বাহিনীর অভিন্ন প্রধান।

এই পদে নিয়োগের মাধ্যমে সেনাপ্রধানের হাতে থাকবে এমন এক সর্বগ্রাসী ক্ষমতা, যা প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী, কাউকেই কার্যত সমান স্তরে রাখবে না। এতে পাকিস্তানের সামরিক আধিপত্য এক নতুন সংবিধানিক রূপ পেতে পারে।

ভারতের মডেল থেকে ‘অনুপ্রেরণা’?

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমই স্বীকার করেছে—এই কাঠামোগত পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা এসেছে ভারতের সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা সংস্কার থেকে। মে মাসে সংঘটিত ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ, তথা ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর সময় ভারতের একীভূত সামরিক প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের দুর্বলতা উন্মোচন করে দেয়।

ভারত ইতিমধ্যেই তিন বাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠনের পথে অনেকদূর এগিয়েছে। ২০১৯ সালে সৃষ্টি হয় চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (CDS) পদ, এবং ২০২৪ সালে কার্যকর হয় একীভূত কমান্ড নীতিমালা, যার মূল লক্ষ্য—সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মধ্যে পূর্ণ সমন্বয় ও সমন্বিত প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি।

ইসলামাবাদ এখন যেন সেই মডেলকেই অনুকরণ করছে, তবে মূল পার্থক্য—ভারতে এটি বেসামরিক নেতৃত্বের অধীনে; পাকিস্তানে তা হবে সম্পূর্ণ সেনাকেন্দ্রিক।

মে যুদ্ধের শিক্ষা ও পাকিস্তানের বাস্তবতা

মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের নির্ভুল পাল্টা আঘাতে পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর ও ড্রোন ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। যুদ্ধের চতুর্থ দিনেই পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (DGMO) ভারতীয় সমকক্ষকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন।

যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্লেষণে পাকিস্তানি সামরিক কর্তারা স্বীকার করেন—ভারতের “ইন্টিগ্রেটেড রেসপন্স মেকানিজম” পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সমন্বয়ের অভাবকে নির্মমভাবে প্রকাশ করেছে। তাই এখন ইসলামাবাদ সেই দুর্বলতাই ঢাকতে চাইছে ‘একীভূত কমান্ড’-এর মোড়কে।

‘অঘোষিত সত্যের সাংবিধানিক রূপায়ণ’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংশোধনী কার্যত পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের এক বাস্তবতাকে—যেখানে সেনাই আসল ক্ষমতার অধিকারী—এখন সংবিধানে খোদাই করে দেওয়ার চেষ্টা।

ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে হার শুধু সামরিক ব্যর্থতা নয়, বরং পাকিস্তানের রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিতও কাঁপিয়ে দিয়েছে। এবার সেই শিক্ষা নিয়েই ইসলামাবাদ স্থায়ী করছে সেনা-প্রাধান্য রাষ্ট্র কাঠামোকে—যার অর্থ, পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ছায়া আরও ক্ষীণ, আর সেনার ছায়া আরও দীর্ঘ।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular