পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর একটি বড় অভিযানে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামক নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর ৩৪ জন সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে পাকিস্তান বাহিনী। এই ঘটনা দেশের পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওরাকজাই জেলায় ঘটেছে, যেখানে গত সপ্তাহে একই গোষ্ঠীর হামলায় ১১ জন সেনা কর্মী, যার মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং একজন মেজর প্রাণ হারিয়েছিলেন।
পাকিস্তান আর্মির মিডিয়া উইং ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এই অভিযানকে ‘প্রতিশোধমূলক অপারেশন’ বলে অভিহিত করে ঘোষণা করেছে যে, এতে সেই হামলার প্রধান অভিযোগীদের ‘নরকে পাঠানো’ হয়েছে।
এই সাফল্য শুধু সামরিক জয় নয়, বরং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে তুলেছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছে কিন্তু একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের মূল কারণগুলোকে নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে।
ঘটনার পটভূমি ফিরে তাকালে দেখা যায়, ৭ অক্টোবর ওরাকজাইয়ের জামাল মায়া এলাকায় টিটিপি সন্ত্রাসীরা একটি গোয়েন্দা-ভিত্তিক অভিযানের সময় পাকিস্তানি সেনাদের উপর হামলা চালিয়েছিল। তীব্র গোলাগুলিতে ১১ জন সেনা কর্মী শহীদ হন, যা দেশের সামরিক বাহিনীকে গভীরভাবে আঘাত করে।
এরপরই সরকার এবং সেনাবাহিনী ‘ফিতনা আল-খারিজ’ (টিটিপি-কে সরকার এই নামে চিহ্নিত করেছে) বিরুদ্ধে প্রতিশোধের শৃঙ্খল অভিযান শুরু করে। গত শুক্রবার আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জামাল মায়া এলাকায় চালানো অভিযানে ৩০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে, যারা সেই হামলার সরাসরি অংশগ্রহণকারী ছিল। কিন্তু সর্বশেষ আপডেটে এই সংখ্যা বেড়ে ৩৪ হয়েছে, যা অভিযানের আরও বিস্তৃত সাফল্য নির্দেশ করে।
পাক সেবার বলছেন, এই অভিযানগুলোতে অ্যাডভান্সড ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং স্পেশাল ফোর্সের ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে। কোনো নিরীহ নাগরিকের ক্ষতির খবর নেই, যা অভিযানের নির্ভুলতা প্রমাণ করে। টিটিপি, যা ২০০৭ সালে গঠিত হয় এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে বিপজ্জনক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত।
দীর্ঘদিন ধরে এই জঙ্গি গোষ্ঠী উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানে সক্রিয়। এই গোষ্ঠী আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে সীমান্ত পার হয়ে হামলা চালায়। ২০২১ সালে আফগান তালেবানের ক্ষমতায় আসার পর থেকে টিটিপির কার্যকলাপ আরও তীব্র হয়েছে, যার ফলে গত এক বছরে পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে জঙ্গি হামলার সংখ্যা বেড়েছে।
সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০০০ সাল থেকে এই সংঘর্ষে ৬৩ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে ৩৪ হাজারেরও বেশি জঙ্গি , ৭ হাজার সেনা কর্মী এবং ২২ হাজার নাগরিক অন্তর্ভুক্ত। এই সাম্প্রতিক অভিযানটি ২০১৪ সালের জড়োপ-অপারেশনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, যখন সেনাবাহিনী টিটিপিকে উত্তর-পশ্চিম থেকে আফগানিস্তানে খেদিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সীমান্তের টানেল এবং গোপন পথগুলো দিয়ে তারা ফিরে আসছে, যা পাকিস্তানের জন্য চলমান হুমকি।