সেনাপ্রধান নাকি সেলসম্যান? ট্রাম্পকে বিরল খনিজ দেখিয়ে সমালোচনার মুখে মুনির

ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস এক মুহূর্তেই যেন ইসলামাবাদের রাজনীতিতে আগুন ধরাল। বিরল খনিজভর্তি কাঠের বাক্স হাতে তুলে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চমকে দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের…

Pakistan Army Chief Controversy

ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস এক মুহূর্তেই যেন ইসলামাবাদের রাজনীতিতে আগুন ধরাল। বিরল খনিজভর্তি কাঠের বাক্স হাতে তুলে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চমকে দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। কিন্তু সেই ছবিই দেখে পাকের অন্দরে উঠল তীব্র সমালোচনার ঝড়ে।

Advertisements

সেনেটরের কটাক্ষ, ভাইরাল বক্তৃতা

সেনেটর খান বলেন, “কোন দেশের সেনাপ্রধান এমনভাবে বিরল খনিজের বাক্স হাতে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সামনে হাজির হন? এটা তো যেন বড় ব্র্যান্ডেড দোকানের ম্যানেজার খুশি মনে দেখছে—দোকানদার কাস্টমারকে চকচকে জিনিস দেখিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছে।” তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

   

হোয়াইট হাউসে বিতর্কিত মুহূর্ত Pakistan Army Chief Controversy

গত সপ্তাহেই হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যায়, ট্রাম্প মনোযোগ দিয়ে একটি কাঠের বাক্সে রাখা বিরল খনিজ পরীক্ষা করছেন। সেই বাক্সটি উপহার দেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির। পাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, তবে তাঁকে পুরোপুরি ‘সাইডলাইনে’ বসে থাকতে দেখা যায়। এই মুহূর্তই বিতর্কের কেন্দ্রে।

এই সফরে পাকিস্তানের সামরিক প্রকৌশল সংস্থা ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন এবং মার্কিন সংস্থা ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই করেছে। যার আওতায় পাকিস্তানের মাটিতে প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত খনিজ যৌথভাবে অনুসন্ধান করা হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত পাঁচ মাসে এটি মুনিরের তৃতীয় আমেরিকা সফর।

‘গণতন্ত্রের অপমান’ অভিযোগ

আইমল ওয়ালি খানের প্রশ্ন,“কোন ক্ষমতায় সেনাপ্রধান এ ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেন? কোন আইনের বলে? এটা সরাসরি সংসদের প্রতি অবমাননা এবং সংবিধানের সঙ্গে পরিহাস। এ যেন একনায়কতন্ত্রের প্রকাশ।” তিনি আরও দাবি করেছেন, নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্বকে দুর্বল করে সেনা নেতৃত্বের এই ভূমিকা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

যৌথ অধিবেশনের দাবি

পাকিস্তানি সেনেটর শুধু সমালোচনাতেই থেমে থাকেননি। তিনি সংসদের যৌথ অধিবেশন দাবি করেছেন, যেখানে পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি, ট্রাম্পের গাজা শান্তি প্রস্তাবে ইসলামাবাদের সমর্থন এবং মুনির-ট্রাম্প বৈঠকের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশের দাবি তুলেছেন।

এক ঝলক রাজনৈতিক বাস্তবতা

পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর প্রভাব বরাবরই প্রবল। কিন্তু বিরল খনিজের ‘ব্রিফকেস কূটনীতি’ যে জনসমক্ষে এমন তীব্র কটাক্ষ ডেকে আনবে, তা মুনির হয়তো ভাবেননি। সেনাপ্রধানের এই ‘ফটো-অপ’ কেবল হাসির খোরাকই নয়, বরং ইসলামাবাদের রাজনৈতিক পরিসরে এক গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—দেশটি আসলে নির্বাচিত সরকারের হাতে চলছে, নাকি সেনাশাসনের ছায়াতেই বন্দি রয়ে গিয়েছে?