ভারত বিরোধিতাই হাতিয়ার, আসিম মুনির পেল আরও বড় দায়িত্ব

সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক বড়সড় পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে উপমহাদেশ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে (Asim Munir) দেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদ ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত করলেন প্রধানমন্ত্রী…

Pakistan Army Chief Asim Munir

সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক বড়সড় পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে উপমহাদেশ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে (Asim Munir) দেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদ ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত করলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এর মাধ্যমে মুনির এখন পাকিস্তানের জল, স্থল এবং নৌ – তিন বাহিনীরই কার্যত নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠলেন। এই পদোন্নতি শুধুমাত্র সামরিক স্তরে নয়, বরং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিতেও সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বের ইঙ্গিত বহন করছে।

আসিম মুনির পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক অভিজ্ঞ এবং কৌশলী কর্মকর্তা। তিনি আইএসআই (Inter-Services Intelligence) প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন সামরিক অভিযান হয়েছে এবং জঙ্গি দমনে কিছু সফলতা দাবি করেছে পাকিস্তান। তবে, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় মুনিরের নাম উঠে এসেছে কূটনৈতিক মহলে। এই ঘটনার পরপরই তাঁকে এমন উচ্চ পদে উন্নীত করা প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই – এই কি তবে সেই ‘পুরস্কার’, যা ভারত-বিরোধিতাকে প্রশ্রয় দিয়ে দেওয়া হলো?

   

প্রসঙ্গত, আসিম মুনিরকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। ইমরান খান সরকারের পতনের নেপথ্যে মুনিরের ভূমিকা ছিল বলেও গুঞ্জন রয়েছে। ২০২২ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ইমরান খানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব যখন চরমে, তখন মুনিরই ছিলেন সেনার মুখ্য চালক। ফলে ইমরান খানের পতনের পর মুনির-শরিফ জুটি ক্রমশ শক্তিশালী হয়। এবার সেই সম্পর্ক আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।

পাক প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের বিবৃতি অনুযায়ী, “মন্ত্রিসভার বৈঠকে আসিম মুনিরের পদোন্নতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সর্বসম্মতভাবে সেই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।” এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামরিক ব্যবস্থার একটি সুস্পষ্ট বার্তা উঠে আসে – সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব আরও মজবুত হচ্ছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে তাদের ভূমিকা আরও জোরদার হতে চলেছে।

Advertisements

এদিকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই পদোন্নতি তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে এসেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীই জঙ্গি কার্যকলাপকে মদত দেয় এবং সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করে রাখে। আসিম মুনিরের নেতৃত্বে এই অভিযোগ আরও তীব্র হচ্ছে, বিশেষ করে যখন কাশ্মীরে নিরীহ নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটে জঙ্গি হামলায়। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হওয়া আন্তর্জাতিক মহলকেও ভাবাচ্ছে।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে সামরিক বাহিনী সরকারের অধীনস্থ থাকার কথা, সেখানে পাকিস্তানের মতো দেশে এই ব্যালান্স বরাবরই ভঙ্গুর। এবার তা আরও স্পষ্ট হলো। মুনিরের মতো একজন সেনা কর্মকর্তার হাতে এখন কার্যত দেশের পুরো নিরাপত্তা ও কৌশলগত নীতি চলে যাওয়ার অর্থ, রাজনীতির উপরে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ আরও প্রতিষ্ঠিত হওয়া।

সব মিলিয়ে বলা যায়, আসিম মুনিরের ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও ভারত-পাক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। এই পদক্ষেপ কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বরং উপমহাদেশে নিরাপত্তা এবং কৌশলগত ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।