রাষ্ট্রসংঘে নতুন পদে পাকিস্তান, বিশ্বজুড়ে সমালোচনা

পাকিস্তান (pakistan) ২০২৫ সালে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) ১৯৮৮ তালিবান স্যাংশন কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছে, যা তালিবান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনের উপর সম্পদ বাজেয়াপ্ত , ভ্রমণ…

pakistan new role in UNSC

পাকিস্তান (pakistan) ২০২৫ সালে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) ১৯৮৮ তালিবান স্যাংশন কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছে, যা তালিবান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনের উপর সম্পদ বাজেয়াপ্ত , ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য দায়ী।

তবে, পাকিস্তান (pakistan) তার প্রত্যাশিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্যাংশন কমিটির চেয়ারম্যানশিপ পেতে ব্যর্থ হয়েছে, যা সম্ভবত দেশটির ক্রস-বর্ডার সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার রেকর্ডের কারণে। পাকিস্তান ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্টার-টেররিজম কমিটির (১৩৭৩ সিটিসি) ভাইস-চেয়ার হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছে, তবে এই পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক এবং তেমন প্রভাবশালী নয়।

   

রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সহায়ক সংস্থাগুলির চেয়ারদের তালিকা অনুযায়ী, ডেনমার্ক ২০২৫ সালে ১২৬৭ আইএসআইএল এবং আল-কায়দা স্যাংশন কমিটির নেতৃত্ব দেবে, যেখানে রাশিয়া এবং সিয়েরা লিওন ভাইস-চেয়ার হিসেবে কাজ করবে।

আলজেরিয়া ১৩৭৩ কাউন্টার-টেররিজম কমিটির চেয়ার হবে, এবং ফ্রান্স, পাকিস্তান (pakistan) এবং রাশিয়া ভাইস-চেয়ার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তান ডেনমার্কের সঙ্গে ডকুমেন্টেশন এবং গ্রিসের সঙ্গে সাধারণ স্যাংশন ইস্যুজ নিয়ে ইনফরমাল ওয়ার্কিং গ্রুপের (আইডব্লিউজি) সহ-চেয়ার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে।

পাকিস্তান কী চেয়েছিল? (pakistan)

পাকিস্তান (pakistan) ১২৬৭ আইএসআইএল এবং আল-কায়দা স্যাংশন কমিটি, ১৫৪০ (নন-প্রলিফারেশন) স্যাংশন কমিটি, ১৯৮৮ তালিবান স্যাংশন কমিটি এবং ১৩৭৩ কাউন্টার-টেররিজম কমিটির চেয়ারম্যানশিপ দাবি করেছিল। কিন্তু শুধুমাত্র তালিবান স্যাংশন কমিটির চেয়ারম্যানশিপ পেয়েছে, যা তার প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। ১৩৭৩ সিটিসি-তে ভাইস-চেয়ারের পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষমতার অধিকারী নয়। ভারত ২০১১ এবং ২০২২ সালে এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিল।

নিরাপত্তা পরিষদের কমিটিগুলির সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হয়, তাই পাকিস্তানের (pakistan) বর্তমান বরাদ্দ তার নেতৃত্বের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক নিচে। পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, রাষ্ট্রসংঘে গিয়েও তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের ক্রস-বর্ডার সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার ইতিহাস এই ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের রেকর্ড

রেকর্ড অনুযায়ী, ১২৬৭ ইউএনএসসি স্যাংশন কমিটিতে তালিকাভুক্ত ২৫৪ জন ব্যক্তি এবং ৮৯টি সংগঠনের মধ্যে ৫০টিরও বেশি জঙ্গি বা সংগঠন পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের নিষিদ্ধ জঙ্গি মাসুদ আজহার এবং সাদ হুসেন রিজভি। এই কারণে পাকিস্তানকে ১২৬৭ কমিটির চেয়ারম্যানশিপ দেওয়া হয়নি, যাতে তারা এই পদের অপব্যবহার করতে না পারে।

ভারত বারবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে পাকিস্তান (pakistan) রাষ্ট্রসংঘের নিষিদ্ধ জঙ্গি এবং সংগঠনের সর্বাধিক সংখ্যক আশ্রয়দাতা। উল্লেখযোগ্যভাবে, আল-কায়দার নেতা ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের আবোটাবাদে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মার্কিন নৌবাহিনীর অভিযানে নিহত হন।

সম্প্রতি, ২০২৪ সালের এপ্রিলে পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, যার জবাবে ভারত কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা এবং পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার অন্তর্ভুক্ত।

Advertisements

ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব

ভারত, যিনি ২০২১-২২ মেয়াদে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ১৩৭৩ কাউন্টার-টেররিজম কমিটি এবং ১৯৮৮ তালিবান স্যাংশন কমিটির চেয়ার ছিল, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের রেকর্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তালিবান স্যাংশন কমিটিতে ভারতের মিত্র রাশিয়া এবং গায়ানা ভাইস-চেয়ার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে, যা পাকিস্তানকে এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতে বাধা দেবে। এছাড়া, পাকিস্তান ডেনমার্ক এবং গ্রিসের সঙ্গে দুটি ইনফরমাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সহ-চেয়ার হিসেবে কাজ করবে, যারা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে।

ভারত বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য না হলেও, তার কূটনৈতিক প্রভাব এবং পি৫ দেশগুলির (চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং অস্থায়ী সদস্য ডেনমার্কের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পাকিস্তানের (pakistan) যেকোনো প্রতিকূল পদক্ষেপ রোধ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা এবং সর্বসম্মতির প্রয়োজনীয়তার কারণে পাকিস্তান কোনো বড় পরিবর্তন বা প্রস্তাব পাশ করতে পারবে না।

রাতে ফের দেখা চিতাবাঘ, ঘুম উড়েছে ঘুঘুমারিতে

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের (pakistan) এই নিয়োগকে ভারত, আফগানিস্তান, ইরান এবং পশ্চিমা দেশগুলি সমালোচনা করেছে, যারা পাকিস্তানকে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার এবং তাদের বিদেশ নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলা এবং ওসামা বিন লাদেনের পাকিস্তানে আশ্রয় প্রাপ্তির ঘটনা এই অভিযোগগুলিকে আরও জোরদার করেছে।

ভারতীয় কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এই নিয়োগকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন এবং পাকিস্তানকে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) গ্রে লিস্টে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের (pakistan) এই নিয়োগ রাষ্ট্রসংঘের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো সংগঠনগুলিকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই নিয়োগ সত্ত্বেও, পাকিস্তানের প্রভাব সীমিত থাকবে, কারণ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতির ভিত্তিতে নেওয়া হয় এবং ভারতের মিত্ররা পাকিস্তানের পদক্ষেপের উপর নজর রাখবে।