দয়ার দান! আমেরিকার কাছ থেকে এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল পাচ্ছে পাকিস্তান

Pakistan AMRAAM missiles from US

কলকাতা: দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্কে নতুন অধ্যায় খুলতে চলেছে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ (DoW) বা যুদ্ধ দফতরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, পাকিস্তান আমেরিকার কাছ থেকে পাচ্ছে অত্যাধুনিক AIM-120 Advanced Medium-Range Air-to-Air Missile (AMRAAM) বা মাঝারি পাল্লার আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র।

Advertisements

বিদেশি ক্রেতাদের তালিকায় পাকিস্তান

রেথিয়ন (Raytheon) কোম্পানির তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন চুক্তির আওতায় পাকিস্তানকে রাখা হয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের তালিকায়। DoW জানিয়েছে, রেথিয়নকে এই প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৪১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে—যা পূর্ববর্তী চুক্তির (FA8675-23-C-0037) সম্প্রসারিত রূপ। ফলে মোট চুক্তির মূল্য দাঁড়াল ২.৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। তবে পাকিস্তান কত সংখ্যক AMRAAM পাচ্ছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

   

এই নতুন অস্ত্রচুক্তির আওতায় পাকিস্তানের পাশাপাশি ব্রিটেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও সৌদি আরবের নামও রয়েছে। প্রকল্পের কাজ ২০৩০ সালের মে মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা।

F-16 যুদ্ধবিমান বহর নিয়ে নতুন জল্পনা Pakistan AMRAAM missiles from US

পাকিস্তানকে এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করার ফলে দেশটির বিমানবাহিনীর F-16 যুদ্ধবিমান বহর নিয়ে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, AMRAAM কেবলমাত্র F-16 বিমানেই ব্যবহারযোগ্য। ২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষের সময় পাকিস্তানি এফ-১৬ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২১ বিমান ভূপাতিত করা হয়েছিল—যেটি চালাচ্ছিলেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান।

রক্ষা বিষয়ক বিশেষ প্রকাশনা Quwa জানিয়েছে, AIM-120C8 মডেলটি হচ্ছে AIM-120D-এর রপ্তানি সংস্করণ—যা বর্তমানে মার্কিন বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত সবচেয়ে উন্নত AMRAAM সংস্করণ। পাকিস্তান বর্তমানে এর পুরনো C5 সংস্করণ ব্যবহার করছে, যেগুলি ২০১০ সালে ব্লক ৫২ এফ-১৬ বিমানের সঙ্গে কেনা হয়েছিল।

Advertisements

ইসলামাবাদ–ওয়াশিংটনের উষ্ণ সম্পর্ক 

এই চুক্তি এমন এক সময়ে হল, যখন ইসলামাবাদ–ওয়াশিংটনের সম্পর্ক দৃশ্যত অনেকটাই উষ্ণ হয়েছে। গত মাসে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির-এর সঙ্গে। এর আগেই জুন মাসে ট্রাম্প ও মুনিরের মধ্যে ওভাল অফিসে একান্ত বৈঠক হয়েছিল, যা পাকিস্তান-মার্কিন সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক বিরল ঘটনা।

তদুপরি, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবর জুলাই মাসে মার্কিন বিদেশ দফতরে সফর করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছর মে মাসে ভারত–পাকিস্তান সীমান্তে সংক্ষিপ্ত সংঘাতের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও কূটনৈতিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রস্তাব 

সংঘাতের পর পাকিস্তান দাবি করেছিল, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় সরাসরি ভূমিকা নিয়েছিলেন ট্রাম্প নিজে। ইসলামাবাদ এমনকি তাঁর নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও প্রস্তাব করেছিল। যদিও ভারত সরকার জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতি বাস্তবে সম্ভব হয় দুই দেশের সামরিক পরিচালকদের (DGMOs) সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের হাতে নতুন প্রজন্মের AMRAAM পৌঁছানো শুধু প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নয়, মার্কিন ভূরাজনীতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্য পুনর্নির্মাণের ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকতে পারে এই চুক্তির আড়ালেই।