শান্তিচুক্তি ব্যর্থ হলেই তালিবানদের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান

pakistan-afghanistan-istanbul-peace-talks-2025

ইসলামাবাদ: সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা। চলমান ইস্তানবুল বৈঠকে স্থায়ী শান্তিচুক্তি না হলে “খোলা যুদ্ধ” বেধে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা মুহাম্মদ আসিফ। তাঁর মন্তব্যে স্পষ্ট, দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এখন এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের উপর দাঁড়িয়ে।

Advertisements

শনিবার থেকে শুরু হওয়া ইস্তানবুল আলোচনায় অংশ নিয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। আলোচনার উদ্দেশ্য সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি ও শান্তি স্থাপনের পথ খোঁজা।

“চেন্নাইয়িনের বিপক্ষে জয়…” একী বললেন অস্কার?

তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ, এ মাসের শুরুতে তীব্র গোলাগুলিতে দুই দেশের অন্তত ডজনখানেক সেনা ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিলেন, যার জেরে একাধিক সীমান্ত চৌকি ও বাণিজ্যিক পথ বন্ধ হয়ে যায়।

শনিবার ইসলামাবাদে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে খাওয়াজা আসিফ বলেন, “আমাদের সামনে দুটি রাস্তা হয় একটি স্থায়ী চুক্তি হবে, নয়তো খোলা যুদ্ধ শুরু হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আফগানিস্তান শান্তি চায়।” তাঁর এই মন্তব্য উদ্ধৃত করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তানের ভেতরে তালিবান শাসিত এলাকাগুলো থেকে ইসলামাবাদের উপর একাধিক জঙ্গি হামলা চালানো হচ্ছে। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP) গোষ্ঠীর সদস্যরাই এই হামলাগুলি পরিচালনা করছে। সেই কারণেই পাকিস্তান সাম্প্রতিক সপ্তাহে আফগান ভূখণ্ডে একাধিক ক্রস-বর্ডার এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছে, যার জেরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

তালিবান সরকার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কোনওভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। বরং ইসলামাবাদের “অতিরিক্ত সামরিক প্রতিক্রিয়া” সীমান্তবাসীদের ক্ষতি করছে।

Advertisements

এই অবস্থায় ইস্তানবুল বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের শেষ সুযোগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক আধিকারিক বলেছেন, “আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ায় পৌঁছাতে চাই যা দোহা চুক্তির মতোই দীর্ঘস্থায়ী হবে।”

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তান-আফগান সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হয়েছে। একদিকে পাকিস্তান ছিল তালিবান সরকারের অন্যতম প্রথম সমর্থক, কিন্তু এখন সেই সম্পর্কেই ভাঙন ধরেছে। সীমান্তে সংঘর্ষ, চোরাচালান ও জঙ্গি হামলার অভিযোগে দুই দেশই পরস্পরের প্রতি ক্রমে অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।

খাওয়াজা আসিফ জানিয়েছেন, ইস্তানবুল বৈঠকে অন্তত “অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি” বজায় রাখার বিষয়ে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে। তাঁর কথায়, “গত চার থেকে পাঁচ দিন ধরে কোনও নতুন সংঘর্ষ হয়নি। উভয় পক্ষই আপাতত যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে।” তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, “যদি আলোচনায় স্থায়ী সমাধান না আসে, তাহলে যুদ্ধ অনিবার্য।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এই বক্তব্য মূলত আফগানিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল। কিন্তু এই হুঁশিয়ারি একইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য বড় বিপদ সংকেত। কারণ, ২,৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুরান্ড লাইন সীমান্তে যে কোনও নতুন সংঘর্ষ গোটা অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

এদিকে, ইসলামাবাদের ভেতরেও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—বহু বছর ধরে তালিবানকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করা পাকিস্তান আজ নিজের তৈরি পরিস্থিতির ফাঁদে পড়েছে কি না। কারণ, তালিবান শাসনের পর আফগান ভূখণ্ড কার্যত হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির নিরাপদ আশ্রয়স্থল।