মার্কিন নির্বাচনের একদিন আগে উত্তর কোরিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা

উত্তর কোরিয়া (North Korea) আবারও একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, যা মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্তৃপক্ষ জানায়। এটি ছিল কয়েক দিনের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার…

North Korea

short-samachar

উত্তর কোরিয়া (North Korea) আবারও একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, যা মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্তৃপক্ষ জানায়। এটি ছিল কয়েক দিনের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার (North Korea)  দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ, এবং ঘটনাটি ঘটেছে মার্কিন নির্বাচনের একদিন আগে, যখন আমেরিকানরা তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দিচ্ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার (North Korea) জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ জানিয়েছে, “উত্তর কোরিয়া একটি অজানা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে,” তবে তারা আরও কোনো বিস্তারিত তথ্য দেয়নি এবং বলেছে যে, ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।

   

দক্ষিণ কোরিয়ার (North Korea) সামরিক সূত্র অনুসারে, ক্ষেপণাস্ত্রটি উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছে এবং এটি দক্ষিণ কোরিয়া (North Korea) যে সমুদ্রকে ‘ইস্ট সি’ (East Sea) বা ‘Sea of Japan’ নামে চেনে, সেখানে পড়েছে। একই সঙ্গে, জাপানও উৎক্ষেপণটি নিশ্চিত করেছে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী অফিস জানিয়েছে যে, এটি একটি “সন্দেহজনক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র” ছিল।

এই উৎক্ষেপণটি কেবল একটি সশস্ত্র মহড়া নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং কৌশলগত সংকেত। বিশেষত, এই সময়েই উত্তর কোরিয়া বলছে যে তারা তার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং আধুনিক সলিড-ফুয়েল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (ICBM) পরীক্ষা করেছে। এটি ছিল কিম জং উনের প্রথম অস্ত্র পরীক্ষা, যেহেতু তাকে রাশিয়ায় সৈন্য পাঠানোর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণটি ঘটে ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরে, যখন দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রধানরা এক যৌথ বিবৃতিতে উত্তরের সেনাদের রাশিয়ায় মোতায়েনের বিষয়টি তীব্রভাবে নিন্দা করেছিলেন। তারা সতর্ক করেছিলেন যে, রাশিয়ার সেনা ইউনিফর্ম পরা উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করা হতে পারে। উত্তরের এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক মহলে অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে, কারণ রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া গত জুনে এক চুক্তি সই করেছে, যার মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং কিম জং উনের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার হয়।

যৌথ সামরিক মহড়া এবং উত্তেজনা
শুক্রবার, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি যৌথ বিমান মহড়ার আয়োজন করে, যা উত্তরের ICBM উৎক্ষেপণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ছিল। এই মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের B-1B বোম্বার, দক্ষিণ কোরিয়ার F-15K এবং KF-16 যুদ্ধবিমান এবং জাপানের F-2 যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। এই যৌথ মহড়া উত্তরের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর, কারণ তারা মনে করে, এসব মহড়া মূলত একটি আক্রমণমূলক প্রস্তুতি হিসেবে করা হয়।

এ বিষয়ে কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং, যিনি উত্তর কোরিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্র, বলেছেন যে, এই মহড়া “অত্যন্ত শত্রুতাপূর্ণ এবং বিপজ্জনক” এবং এটি “প্রমাণ করে যে, আমাদের প্রতি শত্রুর হুমকি ও আক্রমণকারিতার প্রকৃতির মাত্রা কতটা উচ্চ”। তিনি আরও বলেন যে, এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের পথ আরও বাড়িয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া তার সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সম্ভবত দুইটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য করেছে। প্রথমত, এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার সৈন্য মোতায়েন এবং অস্ত্র সরবরাহের খবর থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে একটি কৌশল হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এই অস্ত্র পরীক্ষাগুলি একটি সংকেত হিসেবে কাজ করছে, যাতে আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় এবং মার্কিন নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তর কোরিয়া নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করতে চাইছে।

দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, উত্তর কোরিয়া সম্ভবত ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক সহায়তার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং সেনাদের মোতায়েন করছে। তবে উত্তর কোরিয়া এই অভিযোগগুলো নাকচ করেছে, তবে তাদের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন যে, যদি তারা সৈন্য পাঠায়, তবে তা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী করা হবে।

ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং বৃহত্তম পরমাণু শক্তির প্রতিযোগিতায় উত্তরের এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং শক্তিশালী সামরিক মহড়ার কারণে উত্তরের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে। উত্তর কোরিয়া, যদি তার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার আগ্রাসী কৌশল অব্যাহত রাখে, তবে তা সমগ্র কোরিয়ান উপদ্বীপ এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের বিশ্বব্যাপী চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে।

এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়াগুলি উত্তরের পক্ষ থেকে অগ্নিপরীক্ষার সৃষ্টি করবে, যা পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে। একদিকে উত্তরের পরমাণু সক্ষমতা এবং অন্যদিকে তার সেনা মোতায়েন নিয়ে সৃষ্ট কৌশলগত উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলছে।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, যদি কিম জং উন শান্তির পথে চলতে ইচ্ছুক হন, তবে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাস সম্ভব হতে পারে।