“ছোঁয়া যাবে না!” তালিবান-রাষ্ট্রে মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধারে ব্রাত্য মহিলারা

কাবুল: পরম্পরা এবং ঐতিহ্যের আস্ফালন করা তালিবানদের (Taliban) কাছে মহিলাদের জীবনের যে কোনও মূল্য নেই, তা একবার ফের প্রমাণ করল আফগানিস্তান। পুরুষদের স্পর্শে “মানা”, তাই…

কাবুল: পরম্পরা এবং ঐতিহ্যের আস্ফালন করা তালিবানদের (Taliban) কাছে মহিলাদের জীবনের যে কোনও মূল্য নেই, তা একবার ফের প্রমাণ করল আফগানিস্তান। পুরুষদের স্পর্শে “মানা”, তাই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে প্রাণের স্পন্দন পাওয়া গেলেও কেবলমাত্র ‘মহিলা’ বলে উদ্ধারে এগিয়ে আসছে না কোনও হাত!

Advertisements

উদ্ধারকারী দলে (Rescue Team) মহিলাদের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে কোনক্রমে নিজেদের প্রচেষ্টায় বেরিয়ে আসছেন মহিলারা (Women)। আর যারা প্রাণ হারিয়েছেন, শুধুমাত্র মহিলা হওয়ায় পোশাক ধরে টেনে বের করা হচ্ছে মৃতদেহগুলিকে। কুনার অঞ্চলের আন্দারলুকাক গ্রামের আয়েশা বিবি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমাদেরকে এক জায়গায় একত্রিত করে রেখে ওরা কার্যত ভুলেই যায়। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর একদল উদ্ধারকারী দলকে দেখতে পাই”।

   

ভয়াবহ ভূমিকম্প (EarthQuake) এবং আফটার শকে (After shock) বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কুনার এবং নানগারহার অঞ্চলে মহিলাদের সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। একদিকে যখন আহত পুরুষ এবং শিশুদের দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে তখন রক্তাক্ত, বিধ্বস্ত অবস্থায় ধ্বংসস্তূপ ঠেলে নিজেরাই বেরিয়ে আসছেন মহিলারা।

মাজার দারায় উদ্ধারকাজে যাওয়া এক স্বেচ্ছাসেবক তাজিবুল্লাহ মুজাহেব জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা যেন মহিলাদের দেখতেই পাচ্ছেন না। মেডিক্যাল টিমের (Medical Team) প্রত্যেকেই পুরুষ হওয়ায় মহিলাদের চিকিৎসায় হাত বাড়াচ্ছেন না তাঁরাও। তাজিবুল্লাহ বলেন, “পুরুষ এবং শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও আহত মহিলাদের পাশে একত্রিত করে বসিয়ে রাখা হচ্ছে।”

ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রাণ হারানো মহিলাদের কোনও পুরুষ আত্মীয় না থাকলে উদ্ধারকারীরা পোশাক ধরে টেনে মহিলাদের মৃতদেহ বের করছে বলে জানিয়েছেন তাজিবুল্লাহ। যদিও ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং আফটার শকে আফগানিস্তানে মহিলা-পুরুষ মৃত্যুর অনুপাত এখনও প্রকাশ করেনি তালিবান (Taliban) সরকার, তবে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২২০০ ছাড়িয়েছে, আহত প্রায় ৩৬০০-রও বেশি।

উল্লেখ্য, বিগত ৪ বছরের তালিবান শাসনে আফগান মহিলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাইরে ঘোরাফেরা, কথা বলার স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে ছিনিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। এখন তাঁদের বাঁচার অধিকারও যে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে তা স্পষ্ট।