ভারত-ফ্রান্সের কৌশলগত সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনা

ভারত এবং ফ্রান্সের(India & France) কৌশলগত সম্পর্ক বহু বছর ধরে অবিচ্ছিন্নভাবে শক্তিশালী হয়েছে। দুদেশের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত, যেমন প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং…

ভারত এবং ফ্রান্সের(India & France) কৌশলগত সম্পর্ক বহু বছর ধরে অবিচ্ছিন্নভাবে শক্তিশালী হয়েছে। দুদেশের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত, যেমন প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী এবং মজবুত কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যা আজকের দিনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন অংশে যখন ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ অঞ্চলের জন্য এক উন্মুক্ত পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতি কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তখন ভারত ও ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেকে আরও বিকাশ ও শক্তিশালী করেছে। ভারত-ফ্রান্স সম্পর্ক এখন এমন এক অবস্থানে পৌঁছেছে যেখানে উভয় দেশই একে অপরের কৌশলগত সহায়ক হয়ে উঠছে।

   

ফ্রান্স অনেক বছর ধরে ভারতের বিশ্বস্ত মিত্র। দুই দেশই তার সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে কোল্ড ওয়ারের পরবর্তী সময়ে ভারত-ফ্রান্সের সম্পর্ক আরও গভীরতর হয়েছে। ভারত রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার আগে থেকেই, ১৯৮২-৮৩ সাল থেকে ফ্রান্সের কাছ থেকে মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান কিনে এসেছে।

কোল্ড ওয়ার শেষে যখন ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষা হয়েছিল তখন ফ্রান্সই একমাত্র পি-৫ দেশ ছিল, যে ভারতকে পারমাণবিক সহযোগিতা প্রদান থেকে বিরত থাকেনি। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে পারমাণবিক পরীক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু অন্যদিকে ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া ছিল উল্টো।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের কথা উল্লেখ করেছেন। যা ‘আধিপত্যবাদী’পশ্চিমী শক্তির বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে আরো দৃঢ় করেছে।

ফ্রান্সের রিইউনিয়ন দ্বীপ ভারতীয় মহাসাগরের মুখে অবস্থান করছে। যা ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রান্স ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া পরিচালনা করে এবং এটি ভারতীয় মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইনের মতো কাজ করতে পারে। ফ্রান্সের এই উপস্থিতি ভারতকে তার কৌশলগত ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

এছাড়া, ভারত-ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ভারতকে আরও কৌশলগতভাবে শক্তিশালী করছে। বিশেষ করে ভারতের পারমাণবিক সক্ষমতা, প্রতিরক্ষা, এবং নিরাপত্তা বিষয়ক ক্ষেত্রে। ফ্রান্স, তার নীতির মাধ্যমে, ভারতের জন্য একটি দ্বিতীয় গ্যারান্টর হিসাবে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে ভারত কেবলমাত্র রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল না হয়ে, ফ্রান্সের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে।

ফ্রান্সের সাথে ভারতের সম্পর্কের এই নতুন যুগের সূচনা ভারতকে একটি নিরাপদ এবং শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করবে, এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।