তুষারপাতের জেরে হিমালয়ে আটকে পড়া ১৫০০-এর বেশি পর্যটককে উদ্ধার

Nepal Rescues 1500+ Tourists from Manang Snowfall

নেপালের (Nepal ) উচ্চভূমির হিমালয়ী অঞ্চলে অকস্মাৎ তীব্র তুষারপাতের কারণে আটকে পড়া ১,৫০০-এরও বেশি পর্যটককে নেপালী নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার করেছে। মানাঙ্গ জেলার উচ্চাঞ্চলে ঘটনাটি ঘটেছে, যেখানে তিলিচো হ্রদ (৪,৯১৯ মিটার উচ্চতায়) এবং খাঙ্গসার, পিসাঙ্গ, আপার মানাঙ্গ এবং হুমদে এলাকায় তুষারপাতের ফলে পথ বন্ধ হয়ে যায়। নেপাল আর্মির ঘোষণা অনুসারে, নিউ ভৈরবীদল গুল্ম থেকে মোতায়েন করা উদ্ধার দল স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচিত প্রতিনিধি, আর্মড পুলিশ ফোর্স, নেপাল পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ২০০-এর বেশি বিদেশী পর্যটকসহ প্রায় ১,৫০০ জনকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এই ঘটনা বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘মোঁথা’-র প্রভাবে সৃষ্ট, যা ভারতের বিভিন্ন অংশে বিধ্বংসী হয়েছে এবং নেপালের পর্বতীয় জেলাগুলিতে অস্বাভাবিক তুষারপাত ডেকে এনেছে।

Advertisements

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে এটি দ্বিতীয়বার এমন তুষারপাতের ঘটনা ঘটেছে, যা মাউন্ট এভারেস্ট এবং অন্যান্য হিমালয়ী অঞ্চলের পর্যটন খাতকে ব্যাহত করেছে। নেপাল আর্মির এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “মানাঙ্গ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র তুষারপাতের কারণে আটকে পড়া প্রায় ১,৫০০ জনকে, যার মধ্যে ২০০-এর বেশি বিদেশী পর্যটক, উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।” এই অভিযানে স্থানীয় নগিস্যাং গ্রামীণ নগরপালিকার ওয়ার্ড চেয়ার চয়ল্পা গুরুঙ্গ জানান, গত দু’দিনে তিলিচো বেস ক্যাম্প থেকে ৮০০ থেকে ৯০০ পর্যটক ফিরে এসেছে। “উচ্চাঞ্চলে তীব্র তুষারপাতের পর প্রায় এক হাজার পর্যটক খাঙ্গসারে নেমে এসেছে, যা তিলিচো হ্রদের আগের শেষ বসতি। অনেকে তুষারপাত এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে নামছে,” তিনি এএনআই-কে ফোনে বলেন।

   

মানাঙ্গ জেলার জেলা প্রশাসন অফিস (ডিএও) জানিয়েছে, পথগুলোতে তুষার পরিষ্কারের চেষ্টা চলছে, কিন্তু তুষারপাতের তীব্রতার কারণে পর্যটকদের সতর্কবাণী জারি করা হয়েছে। জেলা প্রধান নব রাজ পৌড়িয়াল এএনআই-কে নিশ্চিত করেন, “পথ পরিষ্কারের চেষ্টা চলছে, কিন্তু তুষারপাত তীব্র। আমরা নিম্নাঞ্চলের পর্যটক এবং ট্রেকারদের এই সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত পরিক্রমা বাতিল করার অনুরোধ করেছি।” জেলা-স্তরের নিরাপত্তা টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোল, এক্সক্যাভেটর এবং অন্যান্য সরঞ্জামসহ নিরাপত্তা কর্মীরা কাজ করছেন। কিছু এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে, কিন্তু পথের ব্লক অংশগুলো এখনও পরিষ্কার হচ্ছে।

এই তুষারপাত শুধু মানাঙ্গ নয়, বরং এভারেস্ট অঞ্চলের নেপালী এবং চীনা দিক দুটোতেই পর্যটন বন্ধ করে দিয়েছে। রয়টার্সের রিপোর্ট অনুসারে, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের কারণে সোমবার থেকে তুষারপাত শুরু হয়েছে, যা লোবুচে এলাকায় উদ্ধারের জন্য যাওয়া একটি ছোট হেলিকপ্টারের দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে। নেপাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মুখপাত্র জ্ঞানেন্দ্র ভুল জানান, হেলিকপ্টারটি ল্যান্ডিংয়ের সময় ক্র্যাশ হয়েছে, কিন্তু কোনো হতাহতের খবর নেই। আগস্ট মাসে নেপালে ভারী বৃষ্টির কারণে ৫০-এর বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এবং অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তিব্বতের এভারেস্টের পূর্ব দিকে শত শত ট্রেকার আটকে পড়ে, যাদেরকে কয়েকদিনের অভিযানে উদ্ধার করা হয়।

আর্মড পুলিশ ফোর্সের বিবৃতি অনুসারে, মানাঙ্গের তিলিচো বেস ক্যাম্প থেকে ৭৫০ জনকে খাঙ্গসারে নামানো হয়েছে, এবং আরও ৫০ জনকে ক্যাম্পেই আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। খাঙ্গসারে থাকার এবং খাবারের সুবিধা অপর্যাপ্ত হওয়ায় কিছু পর্যটককে ফিরিয়ে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, মুস্তাঙ্গের হিডেন ভ্যালিতে ১২ জন দেশীয় এবং ৩ জন ব্রিটিশ নারী পর্যটক আটকে আছেন, যাদের উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু খারাপ আবহাওয়া বাধা সৃষ্টি করছে। নেপাল আর্মির মুখপাত্র রাজা রাম বাসনেত জানান, মঙ্গলবার থেকে মানাঙ্গে শত শত ট্রেকারকে নিরাপদে নামানো হয়েছে।

Advertisements

মায়াগ্দি জেলার স্থানীয় প্রশাসন অ্যানাপুর্ণা বেস ক্যাম্প (এবিসি) -এর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত, যেখানে তুষারপাতের ঝুঁকিতে জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে। অনুরূপভাবে, মানাসলু এবং ধৌলাগিরি অঞ্চলে ট্রেকিং বন্ধ রাখা হয়েছে। নেপালের আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের সতর্কবাণীতে বলা হয়েছে, বাগমতি, গোর্খা, সোলুখুম্বু, মানাঙ্গ, মুস্তাঙ্গসহ বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টি এবং তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। উপরের মানাঙ্গ এবং হুমদে-চামে রুটে দুটি বুলডোজার মোতায়েন করা হয়েছে তুষার পরিষ্কারের জন্য, যাতে জেলা পুলিশ অফিসের ডিএসপি হরি পৌড়েল, আর্মড পুলিশের ডিএসপি ধ্রুব রেগমি এবং নেপাল আর্মির মেজর অনিল থাপার নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স কাজ করছে।

এই ঘটনা নেপালের পর্যটন শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা, কারণ হিমালয়ী ট্রেকিং দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিলিচো হ্রদ বিশ্বের সর্বোচ্চ হ্রদ হিসেবে পরিচিত, যা অ্যানাপুর্ণা সার্কিটের অংশ এবং প্রতি বছর হাজারো পর্যটক আকর্ষণ করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন অস্বাভাবিক আবহাওয়া বাড়ছে, যা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সরকার এখন পর্যটকদের নিম্নাঞ্চলে থাকার অনুরোধ করেছে এবং সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত পরিক্রমা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে। বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে ব্রিটেন, চীন এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকরা রয়েছেন, যাদের উদ্ধার নেপালী বাহিনীর দক্ষতা প্রদর্শন করেছে।

নেপালের পর্বতীয় জেলাগুলিতে এমন ঘটনা বৃদ্ধির কারণে সরকারকে আরও উন্নত উদ্ধার ব্যবস্থা এবং আবহাওয়া পূর্বাভাসের প্রয়োজন রয়েছে। এই অভিযানে স্থানীয়দের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যারা পর্যটকদের নির্দেশনা দিয়ে এবং খাবার সরবরাহ করে সাহায্য করেছে। ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি মোকাবিলায় পর্যটকদের জন্য বাধ্যতামূলক বীমা এবং আবহাওয়া অ্যাপের ব্যবহার বাড়ানো দরকার। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নেপাল তার হিমালয়ী পর্যটনকে আরও নিরাপদ করতে পারে, যাতে বিশ্বের সৌন্দর্যপ্রেমীরা নির্ভয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। পর্যটকরা এখন নিকটস্থ দূতাবাস বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপডেট নিতে পারেন।