ভয়ঙ্কর ‘জেন জেড’ বিক্ষোভ! পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী দেওবা ও স্ত্রীরে মারধন, দগ্ধ খানালের স্ত্রী

Nepal protests violence

কাঠমাণ্ডু: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ‘জেন জেড’ আন্দোলন দ্রুত অরাজক রূপ ধারন করে। গত কয়েকদিনে হিংসার তাণ্ডবে পাঁচবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেওবা ও তাঁর স্ত্রী আক্রান্ত হন, এছাড়াও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রাকারের মৃত্যু হয়।

Advertisements

জেনজেড-দের দখলে কাঠমান্ডু 

সোমবার বিক্ষোভকারীরা, যাঁরা প্রধানত যুবা এবং সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট ব্লক করার সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত, তাঁরা কাঠমান্ডু শহর দখল করে। পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরের দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়; বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং অনেক নেতাকে আক্রমণের লক্ষ্য করে।

ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, নেপালি কংগ্রেসের নেতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেওবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে। এসময় তাঁর স্ত্রী এবং বিদ্মশমন্ত্রী অর্জু রানা দেওবাও আক্রান্ত হন। এছাড়া, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালা নাথ খানালের বাড়ি দাল্লুতে আগুনে পুড়ে যায়; তাঁর স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রাকার গুরুতর দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেন।

ওলির ব্যক্তিগত বাড়ি বালকোটে আগুন Nepal protests violence

বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাড়ি বালকোটে আগুন দেয় এবং রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল, যোগাযোগ মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং এবং প্রাক্তন গৃহমন্ত্রী রমেশ লেকহাকের সম্পত্তিও আক্রমণের মুখে পড়ে।

পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নেয়, ফলে নেপালি সেনা ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্ব যৌথভাবে শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের আহ্বান জানান। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হলেও বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ কমেনি; রাজনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ এবং মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলন তীব্র রূপ নেয়।

Advertisements

কেন বিক্ষোভ?

‘জেন জেড’ বিক্ষোভ মূলত সরকারের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্লক করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুরু হলেও তা দ্রুত ব্যাপক সামাজিক অসন্তোষের প্রতিফলন হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের—যাদের ‘নেপো কিডস’ বলা হয়—ভাসমান জীবনযাপন ও সুবিধা দেখে সাধারণ যুবসমাজের অসন্তোষ বেড়েছে। বিশ্বের ব্যাঙ্কের তথ্যমতে, গত বছরে যুব বেকারত্ব প্রায় ২০ শতাংশ, এবং সরকার অনুমান করছে প্রতিদিন ২,০০০-এর বেশি যুবক মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কর্মসংস্থানের খোঁজে দেশ ত্যাগ করে।

রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পাওডেল বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন এবং কেপি ওলির পদত্যাগ গ্রহণ করে অস্থায়ী সরকার গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন, যদিও তার ক্ষমতা ও অবস্থান স্পষ্ট নয়।

নেপালের এই আন্দোলন দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য এক নতুন সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে, যেখানে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ ও আশা একত্রিত হয়ে ক্ষমতার স্তরে প্রতিফলিত হচ্ছে।