Sunday, December 7, 2025
HomeWorldরবিবারের ছুটির সকালে ভূমিকম্পে কাঁপল প্রতিবেশী দেশ

রবিবারের ছুটির সকালে ভূমিকম্পে কাঁপল প্রতিবেশী দেশ

- Advertisement -

কাঠমান্ডু, ৭ ডিসেম্বর: রবিবার সকালে ফের কেঁপে উঠল প্রতিবেশী দেশ নেপাল (Nepal Earthquake December 7)। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে মাত্রা ৪.১-এর ভূমিকম্পে দুলে উঠেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র ৫ কিলোমিটার গভীরে—যা ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে “শ্যালো ডেপথ কোয়েক” অর্থাৎ অগভীর ভূমিকম্প।

অগভীর ভূমিকম্প সাধারণত শক্তিশালী ঝাঁকুনি ঘটায়। কারণ, এত কম গভীরে সঞ্চিত শক্তি সরাসরি ভূমির ওপরের অংশে পৌঁছে মানুষের অনুভূতিকে তীব্র করে তোলে। ঠিক সেই কারণেই আজকের এই ৪.১ মাত্রার কম্পনও বেশ কিছু এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছে। যদিও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবুও স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

   

স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্বারস্থ পাকিস্তানি নারী

গত এক সপ্তাহ ধরে ভূমিকম্পে প্রায় বারবারই কেঁপে উঠছে নেপাল। ৩০ নভেম্বর ৪.২ মাত্রার কম্পন এবং তারও আগে ৬ নভেম্বর ৩.৬ মাত্রার ভূমিকম্প নেপালের পশ্চিমাঞ্চলকে নড়বড়ে করে তুলেছিল। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের কম্পনটি হয়েছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে—যা তুলনামূলকভাবে অগভীর। ফলে সেই দিনটিতেও ভূমিকম্পের পর কয়েক ঘণ্টা ধরে সম্ভাব্য আফটারশকের আশঙ্কায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

নেপালের ভূগোলই যেন তাকে বারবার বিপদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। দেশটি পৃথিবীর অন্যতম বড় ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের রেখায় অবস্থান করায় এই এলাকা স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে। ভূগর্ভে ক্রমাগত চাপ সঞ্চয়ের ফলে হঠাৎ শক্তি নির্গত হলেই ঘটে ভূমিকম্প।

এই সংঘর্ষই ধীরে ধীরে আকাশছোঁয়া হিমালয় পর্বতমালা তৈরি করেছে—যার প্রতিটি শিলাস্তর বহন করে বিশাল চাপ, তীব্র ঘর্ষণ এবং বিপুল ভূ-গতিশক্তি। প্লেটের এই অস্থির চলাচলই নেপালকে প্রায় সারা বছর ছোট-বড় ভূমিকম্পের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এলাকার সক্রিয় ফল্ট লাইনগুলো ভবিষ্যতেও বারবার এমন কম্পন ঘটাতে পারে, যার মধ্যে কিছু হতে পারে ধ্বংসাত্মক।

২০১৫ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের স্মৃতি এখনো নেপালের মনে তাজা। ৭.৮ মাত্রার সেই কম্পণে প্রায় ৯,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ভেঙে পড়েছিল পর্যটন নগরী কাঠমান্ডুর বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট মত ২০১৫-এর সেই ভয়াবহতার পেছনেও দায় ছিল এই একই টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নেপালের সিসমোলজি বিভাগ জানিয়েছে, এ ধরনের ক্ষুদ্র ভূমিকম্প প্লেটের চাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। তবে অগভীর গভীরতায় বারবার কম্পন হলে আফটারশকের আশঙ্কা বাড়ে। তাই স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে।

আজ সকালের ভূমিকম্পের পর বহু মানুষ ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। কাঠমান্ডু উপত্যকার কিছু এলাকায় মৃদু ঝাঁকুনি টের পাওয়া গেলেও অধিকাংশ কম্পন অনুভূত হয়েছে দূর উত্তরে। স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীধর রাও জানান, “ঝাঁকুনি খুব বেশি ছিল না, কিন্তু মাটির নিচে দমকা শব্দের মতো অনুভব হচ্ছিল।

তাই সবাই সতর্ক হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।” বিশেষজ্ঞরা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন নেপাল এবং হিমালয় উপত্যকার যেকোনও অঞ্চলেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব। তাই প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকাই একমাত্র উপায়। ঘরবাড়ির কাঠামোগত সুরক্ষা, জরুরি সরঞ্জাম মজুত রাখা, ভূমিকম্প প্রশিক্ষণ সবই এখন সময়ের দাবি।

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের ভূকম্পবিদরা জানিয়েছেন, নেপালে কম্পন হলে উত্তরাখণ্ড, উত্তরবঙ্গ এবং বিহারের কিছু এলাকাতেও এর প্রভাব অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা সীমান্তবর্তী এলাকার ওপর নজর রাখছেন। বারবার কম্পনে অস্বস্তিতে ভুগছে নেপালের মানুষ। তবে বিজ্ঞানীদের মতে হিমালয়ের নিচের অস্থির ভূগর্ভে যতদিন টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ চলবে, ততদিন এই ভূমিকম্প-কম্পনের ইতিহাসও অব্যাহত থাকবে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular