কাঠমান্ডু, ১৩ সেপ্টেম্বর: নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র (Election Dates)পাউডেল শনিবার সকল পক্ষকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ৫ মার্চ ২০২৬-এ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের নতুন নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এক সপ্তাহের সহিংস প্রতিবাদের পর এই ঘোষণা নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে এক নতুন বাঁক দিয়েছে।
এই প্রতিবাদে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবাদের জেরে প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়েছেন। গতকাল প্রাক্তন চিফ জাস্টিস সুশীলা কার্কি দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট পাউডেলের এই আহ্বান দেশের ঐক্য পুনরুদ্ধার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ঘোষণা।
এই সহিংস প্রতিবাদ ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয় এবং দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জেন জি প্রজন্মের নেতৃত্বে এই আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক পালাবদল ঘটায়। প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং অন্যান্য সরকারি ভবন আক্রমণ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
এই হিংসাত্মক প্রতিবাদে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়। ওলি সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রতিবাদকে উস্কে দেয়। ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ওলি পদত্যাগ ঘোষণা করেন এবং বলেন, “আমি জীবনহানির জন্য দুঃখিত, কিন্তু স্বার্থী গোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে অশান্তিতে পরিণত করেছে।”
তাঁর পদত্যাগের পর নেপাল সেনাবাহিনী নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং প্রেসিডেন্ট পাউডেলকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।ওলির পদত্যাগের পর রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয় এবং দুই দিনের তীব্র আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট পাউডেল ১২ সেপ্টেম্বর সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার।
কার্কি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস রচন করেন। তিনি ২০১৬-২০১৭ সালে দেশের প্রথম মহিলা চিফ জাস্টিস ছিলেন এবং দুর্নীতিবিরোধী তাঁর অটল অবস্থানের জন্য পরিচিত। কার্কির নিয়োগের পেছনে প্রেসিডেন্ট পাউডেল, নেপাল আর্মির চিফ জেনারেল অশোক রাজ সিগডেল এবং জেন জি প্রতিবাদ নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য গঠিত হয়।
প্রতিবাদকারীরা কর্কিকে সমর্থন করে কারণ তিনি বরাবর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কর্কির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ভাইস প্রেসিডেন্ট রাম সহায় যাদব এবং চিফ জাস্টিস প্রকাশ মান সিংহ রাওয়াত উপস্থিত ছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রদূত নবীন শ্রীবাস্তবও কার্কিকে অভিনন্দন জানান।
কর্কির সুপারিশে প্রেসিডেন্ট পাউডেল ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টা থেকে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ভেঙে দেন। এই ২৭৫ আসনের সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর পর ৫ মার্চ ২০২৬-এ নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সকল পক্ষকে সহযোগিতা করতে হবে যাতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।”
কর্কির শপথগ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর পাউডেল এই ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট পাউডেল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, আইনজ্ঞ এবং সিভিল সোসাইটির নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তবে, বড় তিনটি দলের নেতারা কর্কির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন, যা তাদের অসমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই ঘটনা একটি টার্নিং পয়েন্ট।
জমকালো ববার বাইক দেখলেই রাইডিংয়ের ইচ্ছে জাগে, জানুন খুঁটিনাটি
ওলি চারবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল)-এর নেতা। তাঁর সরকার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে বার বার। তাই আগামী বছরের ৫ এ মার্চ নতুন করে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।