তিয়ানজিন: আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গনে বড় সাফল্য অর্জন করল ভারত। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর তিয়ানজিন সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায় প্রথমবারের মতো সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত জঙ্গি হামলার ঘটনা। পাকিস্তান এই সংগঠনের পূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও, ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিলের সেই নৃশংস হামলার নিন্দা করেছে SCO-এর ১০ জন স্থায়ী সদস্য দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) চীন সফরের এই ঘোষণা কেবল কূটনৈতিকভাবে নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পাহালগামে জঙ্গিদের নৃশংস হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন। ভারত অভিযোগ তোলে যে পাকিস্তানের মদতেই এই হামলা সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু জুন মাসে চীনের কিংদাও শহরে অনুষ্ঠিত SCO প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান, কারণ তাতে পাহালগামের হামলার কোনো উল্লেখ ছিল না, অথচ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছিল।
তবে এবার চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। SCO-এর যৌথ ঘোষণায় স্পষ্ট বলা হয়েছে: “পাহালগামে সংঘটিত জঙ্গি হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এই ধরনের ঘটনার মূলহোতা, পরিকল্পনাকারী ও মদতদাতাদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনা আবশ্যক।”
তিয়ানজিন সম্মেলনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী সরাসরি পাকিস্তানের নাম না নিলেও কটাক্ষ করেন সেই দেশগুলিকে যারা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দ্বিচারিতা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত ঐক্যের পক্ষে, SCO এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
এই বক্তব্য SCO-এর ঘোষণাতেও প্রতিফলিত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, “সন্ত্রাসবাদের সব রূপ ও প্রকাশ নিন্দনীয়। দ্বিচারিতা বরদাস্ত করা হবে না।”
তিয়ানজিন সম্মেলন ভারতের জন্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার মধ্যেই ভারত চীন ও রাশিয়ার সমর্থন লাভ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছেন, যার অর্ধেকই রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে বলে দাবি তাঁর। ভারত তবে দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে যে রাশিয়ার তেল কেনার মাধ্যমে তারা বাজার স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করছে, মুনাফা করছে না।
এছাড়াও ট্রাম্পের দাবি যে তিনি নাকি “পাহালগামের পর ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ করে”—এ নিয়ে ভারত দ্বিমত পোষণ করেছে। নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট: দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৃতীয় পক্ষের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় না।
SCO সম্মেলনের এই ঘোষণাকে ভারত আন্তর্জাতিক সমর্থনের বড় উদাহরণ হিসেবে দেখছে। পাকিস্তান নিজে সংগঠনের সদস্য হয়েও হামলার নিন্দা করেছে, যা ভারতের জন্য একপ্রকার কূটনৈতিক জয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদি সরকারের দৃঢ় অবস্থান ও অপারেশন ‘সিনদূর’-এর পর এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।